চিড়া-মুড়ি কেন খাবেন?
বন্যাদুর্গত এলাকায় মারাত্মক খাদ্যসংকটে পড়ে মানুষ। পানি নেমে যাওয়ার পরও অনেক বাড়িতেই রান্নাবান্নার সুযোগ হয়ে ওঠে না। জ্বালানিসংকট এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে শুকনা খাবারই হয়ে ওঠে দিনযাপনের পাথেয়। আমাদের দেশে সাধারণত ভাতই প্রধান খাদ্য। ভাত থেকেই মূলত আমাদের রোজকার প্রয়োজনীয় শর্করা গ্রহণ করি আমরা। তবে এমন দুর্যোগের সময়ে চিড়া আর মুড়ি অনায়াসেই হতে পারে ভাতের বিকল্প।
রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম বলছিলেন, শর্করাজাতীয় খাবার থেকে দেহে শক্তির জোগান হয়। চিড়া ও মুড়ি থেকে পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম মুড়ি থেকে ৪০৫ কিলোক্যালরি পর্যন্ত শক্তি পাওয়া যেতে পারে, ১০০ গ্রাম চিড়া থেকে পাওয়া যেতে পারে ৩০০ কিলোক্যালরি পর্যন্ত। এ ছাড়া অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে চিড়া ও মুড়িতে।
বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগের সময় এ ধরনের খাবার গ্রহণ ও বহন করাও সুবিধাজনক। সম্ভব হলে এ ধরনের শুকনা খাবার কিছু পরিমাণে সংরক্ষণও করা যেতে পারে। পুষ্টির ঘাটতি থেকে বাঁচতে এ সময় এ ধরনের খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে, দেওয়া যেতে পারে শিশুদেরও। এই দুই খাবারের ভালোমন্দ নানান দিক নিয়ে আরও নানান তথ্য জানালেন রেহানা বেগম।
পুষ্টির চাহিদা
শর্করা ছাড়াও চিড়া আর মুড়ি থেকে খানিকটা আমিষ, আয়রন, ক্যালসিয়াম আর আঁশ পাওয়া যায়। মুড়ি থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আর ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায় বেশ। তবে সোডিয়াম আর পটাশিয়াম বেশি থাকায় অনেকেই আবার ইচ্ছেমতো মুড়ি খেতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মুড়ি খাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়ে থাকে।
সাদা নাকি লালচে
মুড়ি সাদা করতে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেটি স্বাস্থ্যকর নয়। চিড়া কিংবা মুড়ি যেটাই খাওয়া হোক না কেন, একটু লালচে রঙের দানা বেছে নেওয়া ভালো। দানা যতটা সাদা হবে, বুঝতে হবে সেটি ততটাই পরিশোধিত (রিফাইন্ড), অর্থাৎ, স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
পেটের পীড়ায় চিড়া-মুড়ি?
চিড়া খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য পীড়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিড়া গ্রহণ করতে পারেন। স্বস্তি পাবেন। তবে ডায়রিয়া হলে চিড়ার সঙ্গে দুধজাতীয় খাবার যোগ করা যাবে না। দুধজাতীয় খাবারে ডায়রিয়া বাড়ে। ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য চিড়ার পানিও উপকারী। এতে পেটও ঠান্ডা থাকে, পুষ্টি উপাদানও পাওয়া যায়। গ্লুটেনের উপস্থিতির কারণে আটার তৈরি খাবার খেলে কারও কারও অসুবিধা হয়। তাঁদের জন্য সকালের নাশতা হতে পারে চিড়া কিংবা মুড়ি। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, খালি পেটে মুড়ি খেলে কারও কারও অ্যাসিডিটির প্রবণতা দেখা যায়।