জন্মগত কারণে শিশুদের কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ যেমন সেক্রাম ও কক্সিস তৈরি না হলে তাকে কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম বলে। ৭ হাজার ৫০০ জীবিত শিশুর মধ্যে একজনের এই রোগ দেখা যায়।
মাতৃগর্ভে থাকতে চতুর্থ সপ্তাহে যখন দেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি শুরু হয়, তখন এই রোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এদের মূল নার্ভাস সিস্টেম ভালো থাকে।
এ সমস্যা দেখা দিলে যেসব সমস্যা হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—দুই পা ছোট, পা অবশ, পা নাড়াতে না পারা, পিঠ বাঁকানো, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা বা প্রস্রাব আটকে যাওয়া, জননতন্ত্রের বাইরের অংশ সঠিকভাবে তৈরি না হওয়া, পায়খানার রাস্তার সর্বশেষ অংশ অসম্পূর্ণ থাকা ইত্যাদি।
পিঠে একটি সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকতে পারে যা স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। এ পথে সংক্রমণ ভেতরে ঢুকে মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগ একটি জন্মগত সমস্যা হলেও একই পরিবারে আরেক শিশুর হবে, সে রকম কোনো কথা নেই। সবার সব লক্ষণ না–ও থাকতে পারে।
চিকিৎসা
ফিজিওথেরাপি ও অর্থোসিস সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হুইলচেয়ারে বসে চলাফেরা করতে পারবে, মোটরচালিত হুইলচেয়ার হলে ভালো হয়। প্রস্রাবের থলিতে যদি প্রস্রাব থেকে যায়, তাহলে জমে থাকা অতিরিক্ত প্রস্রাবের চাপে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বারবার ক্যাথেটার করে প্রস্রাব বের করে দিতে হবে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করলে একটু উন্নতি হতে পারে।
একজন রোগী দক্ষিণ আফ্রিকায় কিলিমানজারো পর্বতে আরোহণ করেছেন। একজন শুধু হাতের পাতার সাহায্যে দৌড়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডে একজন সাঁতারে অংশ নিয়ে পদক জিতেছিলেন। কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের সেই ঘানিমকে সবাই মনে রেখেছেন নিশ্চয়ই। ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে প্রথম আসরের সূচনালগ্নে তিনি পবিত্র কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন। তিনিও কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাহায্য নিলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। রোগটি উদ্বেগের কারণ হলেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ভালো থাকায় বুদ্ধির বিকাশ ভালো হয়। প্রচেষ্টা চালালে সুন্দর একটি জীবন পাওয়া যেতে পারে।
ডা. সুদীপ্ত কুমার মুখার্জী, সহযোগী অধ্যাপক, শিশু নিউরোসার্জারি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা