শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে চাইলে খাবারে এই পাঁচ পরিবর্তন আনুন
দুই ধরনের লিপোপ্রোটিন আমাদের রক্তনালি দিয়ে কোলেস্টেরল বহন করে। এর মধ্যে একটি হলো লো–ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল), যাকে সোজা বাংলায় বলা হয় ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বা ‘খারাপ চর্বি’। রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বেড়ে গেলে বাড়তে থাকে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি। কেবল অতিরিক্ত তেল-চর্বি খেলেই নয়, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলেও রক্তে খারাপ চর্বি বাড়ে। অন্যদিকে আবার আঁশসমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। মোটকথা, খাবারের উৎস ও কিছু ক্ষেত্রে খাবারের প্রস্তুতপ্রণালির দিকে খেয়াল রাখলে রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচা সহজ হয়। খাদ্যাভ্যাসের এমন পাঁচটি ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা জেনে নেওয়া যাক আজ। এমনকি এরই মধ্যে আপনার রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক ওষুধ সেবনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে এই পাঁচ পরিবর্তন আনুন, সুফল পাবেন।
অস্বাস্থ্যকর তেল-চর্বির বদলে স্বাস্থ্যকর তেল
কক্ষ তাপমাত্রায় জমে যায়, এমন তেল স্বাস্থ্যকর নয়। চর্বিও কক্ষ তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে থাকে। নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, রান্না করার পর গরু-খাসির মাংস বাটিতে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া হলে জমে যায়। এমনকি পাত্রের তরল ঝোলটুকুও জমে যেতে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এসব স্বাস্থ্যকর নয়। মাখন, ডালডা, ঘি, পনিরও এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে জলপাই তেল থাকবে সবার ওপরে।
অস্বাস্থ্যকর আমিষের বদলে স্বাস্থ্যকর আমিষ
আমিষের উৎস হিসেবে লাল মাংস, মাখন, পনির যে খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়, তা তো বুঝতেই পারছেন। এর বদলে আমিষ গ্রহণ করতে পারেন উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে। খেতে পারেন ডাল, ছোলা, শিম, মটরশুঁটি ও নানান ধরনের বীজ। টোফু ভিনদেশি খাবার হলেও বাড়িতে বানাতে পারেন। আর প্রাণিজ উৎস থেকে আমিষ গ্রহণ করতে চাইলে মাছ বা মুরগি খাওয়া নিরাপদ। নিতান্তই লাল মাংস খেতে হলে কালেভদ্রে খান। তবে অবশ্যই চর্বি ফেলে পাতলা, ছোট টুকরা করে কেটে রান্না করতে হবে। সসেজ, বেকন বা হট ডগের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলুন।
অস্বাস্থ্যকর শর্করার বদলে স্বাস্থ্যকর শর্করা
আমরা সচরাচর সাদা ভাত আর সাদা রুটি কিংবা সাদা পাউরুটিই খাই। তবে বহুল প্রচলিত হলেও আদতে এসব খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়; বরং হোল হুইট বা হোল গ্রেইন পাউরুটি কিংবা হোল গ্রেইন আটার রুটি, বাদামি চালের ভাত, বার্লি কিংবা ওটস খাওয়া স্বাস্থ্যকর। হোল গ্রেইন সিরিয়াল খেতে পারেন; খেয়াল রাখুন, সিরিয়াল যেন চিনিমুক্ত হয়।
ভাজা খাবারের বদলে ভাপে রান্না বা গ্রিল করা খাবার
ভাজা খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। তা সে পরোটাই হোক কিংবা হোক সবজি ভাজি, মাছভাজা, শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, পাকোড়া, চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। এসবের স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন। পরোটা নয়, রুটি খান। এমনকি তেলবিহীন পরোটাও স্বাস্থ্যকর নয়। সবজি না ভেজে বরং ভাপানো সবজি খেতে পারেন। উৎসব-আয়োজনে মুরগি বা মাছ না ভেজে গ্রিল করে খাওয়া যেতে পারে। তেলের পরিমাণ কমিয়ে নানান রকম সুস্বাদু মসলা ব্যবহার করেও খাবার মুখরোচক করে তোলা যায়। খেতে পারেন সুস্বাদু সালাদ।
চিনিযুক্ত স্ন্যাকসের বদলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস
চিনিযুক্ত যেসব খাবার স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া হয়, যেমন কেক, বিস্কুট, কুকি, চকলেট—এসব এড়িয়ে চলুন। চি দেওয়া চা কিংবা অন্যান্য পানীয় দূরে রাখুন। বাদাম কিংবা মৌসুমি ফল হতে পারে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস। তেষ্টা পেয়েছে? পানি খান। কিংবা খেতে পারেন খানিকটা ফলের রস। তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া। প্যাকেটজাত জুসেও চিনি থাকে। তাই তা অস্বাস্থ্যকর। কোমল পানীয় একেবারেই বাদ দিন।
সূত্র: ওয়েবএমডি ও হেলথলাইন