শুঁটকি খেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রোগ ডেকে আনছেন না তো?
ভোজনরসিক বাঙালির বিরাট এক অংশের ভীষণ পছন্দের খাবার শুঁটকি। লবণ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা এই শুঁটকি খেতে দারুণ সুস্বাদু। নিঃসন্দেহে এটি প্রোটিনের ভালো উৎস।
কিন্তু মুশকিল হলো সেসব শুঁটকি নিয়ে, যা তৈরিতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কোনো শুঁটকিতে অত্যধিক লবণ থাকে। এগুলোও খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। শুঁটকির স্বাস্থ্যগত দিক সম্পর্কে বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর শারমিন।
স্বাস্থ্য নিয়ে যা কিছু
পোকা ধরা ঠেকাতে শুঁটকিতে রাসায়নিক বা কীটনাশক মেশানো হয়ে থাকলে, তা ক্ষতিকর। রাসায়নিকের ধরনের ওপর নির্ভর করে ক্ষতির মাত্রা। কোনো শুঁটকি খাওয়ার পর পেটের পীড়ায় ভুগতে হতে পারে। কোনোটির কারণে কিডনি, লিভার কিংবা ত্বকের ওপরও পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়—এমন রাসায়নিকও এখন শুঁটকিতে ব্যবহার করা হয়।
শুঁটকিতে অতিরিক্ত লবণ থাকলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে, যা থেকে পরে হৃদ্রোগ এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।
যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগে ভুগছেন, তাঁদের প্রোটিন গ্রহণের ক্ষেত্রে খানিকটা বিধিনিষেধ থাকে। এমন রোগী যদি শুঁটকি খান, তাহলে সেদিনকার খাদ্যতালিকা থেকে অবশ্যই অন্য কোনো প্রোটিনজাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে।
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকলে শুঁটকি খেতে নিষেধ করা হয়।
যাঁরা শুঁটকি ভালোবাসেন
শুঁটকিপ্রেমীরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন। রাসায়নিক মেশানো রয়েছে কি না, এই সন্দেহের দোলাচলে কি শুঁটকি খাওয়া ছেড়েই দিতে হবে? দাঁড়ান, দাঁড়ান। আরও কথা আছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর কিছু উপায় জানাচ্ছেন রন্ধনশিল্পী সিতারা ফেরদৌস—
শুঁটকি কেনার সময় ঘ্রাণটা ভালোভাবে খেয়াল করুন। রাসায়নিক দেওয়া থাকলে শুঁটকির মূল ঘ্রাণ ছাপিয়ে রাসায়নিকের ঘ্রাণটা নাকে আসবে। ঘ্রাণে ভিন্নতা থাকলে সেই শুঁটকি কিনবেন না। যেকোনো জায়গা থেকে শুঁটকি না কিনে চেনা জায়গার বিশ্বস্ত মানুষের তৈরি শুঁটকি কিনতে পারেন।
বাড়িতে শুঁটকিগুলো কিছুক্ষণ লবণ-পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। রান্নার আগে সময় নিয়ে খুব ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন শুঁটকি।
রান্না করার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় চুলায় রাখুন।
আরও যা
শাহনূর শারমিন পেশায় চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকগুলো জানিয়ে দিলেন ঠিকই। তবে তাঁর শিকড়ও তো চট্টগ্রাম। ছোট থেকেই শুঁটকির মুখরোচক স্বাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। স্বাস্থ্যঝুঁকি কিছুটা কমানোর উপায় জানিয়ে রাখলেন তিনিও—
শুঁটকি ধোয়ার জন্য গরম পানি ব্যবহার করুন।
শুঁটকি সেদ্ধ করার পর পানি ফেলে দিলে অনেকটা লবণ বেরিয়ে যায়।
শুঁটকি রান্নার সময় লবণ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যে লবণ শুঁটকিতে রয়েছে, তা-ই পর্যাপ্ত। লবণ কম দিলে কারও কারও কাছে অবশ্য স্বাদের কমতি অনুভূত হতে পারে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য চাইলে অন্যান্য সুস্বাদু মসলা যোগ করতে পারেন।
প্রতিদিন শুঁটকি না খাওয়াই ভালো। খেতেও হবে পরিমিত। তা ছাড়াও শুঁটকি দেখতে অস্বাভাবিক লাগলে (যেমন রংটা ভিন্ন মনে হলে) কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত বলেই জানালেন তিনি।