নারীদের মতো পুরুষেরও স্তন ক্যানসার হতে পারে। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি নারীদের বেশি হলেও পুরুষেরা একেবারে ঝুঁকিমুক্ত নন; বরং এ বিষয়ে পুরুষদের সচেতনতার অভাবে অনেক সময় চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়। এতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। নারীর থেকে পুরুষের স্তনের আকার আলাদা। পুরুষের শরীরে স্তনের টিস্যু থাকে কম। তাতেও বিপদ দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়।
নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১ শতাংশ স্তন ক্যানসার হয় পুরুষের। নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার ১৯ শতাংশ বেশি। তাই প্রথম থেকেই সাবধান হওয়া দরকার।
পুরুষের স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো নারীদের মতোই। স্তনের আশপাশে ব্যথা ও ফোলা ভাব, স্তনে ঘা কিংবা লালচে হয়। এ ছাড়া স্তনবৃন্ত থেকে পুঁজের মতো তরল পদার্থ বের হয়, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। এসব লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে, কোনো একটি স্তনের নিচে ব্যথাহীন লাম্প বা পিণ্ড দেখা দিতে পারে। অন্য উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে আলসার বা ঘা, স্তনবৃন্ত থেকে স্রাব বের হওয়া, স্তন ফেটে যাওয়া বা কুঁচকে যাওয়া, স্তনবৃন্ত বা স্তনের টিস্যুতে লালচে ভাব বা জ্বালা হওয়া। পরবর্তী পর্যায়ে বগলে লসিকা গ্রন্থি ফোলা বা ব্যথা এবং হাড়ের তীব্র ব্যথা হলে বুঝতে হবে ক্যানসার পার্শ্ববর্তী টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা আছে কি না, সে জন্য ‘বিআরসিএ’ পরীক্ষা করাতে হয়। এটি একটি জিনগত পরীক্ষা। এতে বিআরসিএ১ ও বিআরসিএ২—এই দুটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। পরীক্ষার ফল পজিটিভ হলে সতর্ক হওয়া দরকার। ৫০ ও এর বেশি বয়সী পুরুষের মধ্যে, পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে বা ওজন বেশি থাকলে এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার প্রথম ধাপ অস্ত্রোপচার। লাম্পেক্টমি ক্যানসারে শুধু টিউমার ও আশপাশের কিছু টিস্যু কেটে ফেলা হয়। মাস্টেক্টমিতে গোটা স্তন এবং নিচের মাংসপেশি, বগলের লসিকা গ্রন্থিসহ আনুষঙ্গিক আক্রান্ত টিস্যু কেটে ফেলা হয়। কোনো কোনো রোগীর স্তনের চামড়া সংরক্ষণ করে বিকল্পভাবে স্তন পুনর্গঠন করা হয়।
রেডিক্যাল ম্যাস্টেক্টমির মাধ্যমে বুকের দেয়ালের মাংসপেশি, বগলের নিচে লিম্ফনোডসহ পুরো স্তন কেটে বাদ দেওয়া হয়। ক্যানসার কোষ লিম্ফনোডে পৌঁছে তার মাধ্যমে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। সেন্টিনেল নোড বায়োপসির মাধ্যমে লিম্ফনোড সরিয়ে ফেলা হয়। একে বলা হয় অ্যাক্সিলারি লিম্ফনোড ডিসেকশন। রেডিও থেরাপি দিয়ে ক্যানসারের কোষ নির্মূল করা হয়। তা ছাড়া দেহের অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ স্থাপন করেও চিকিৎসা করা যায়।
সাধারণত স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সময়ে অ্যাডভান্স কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে টিউমার বেশি বড় থাকলে কেমোথেরাপি অস্ত্রোপচারের আগে নিতে হতে পারে। সাধারণত ৬-৮ ডোজ (প্রতি মাসে একটি করে) বা রক্তনালির মাধ্যমে ইনজেকশন দেওয়া হয়।
কেমোথেরাপি ইস্ট্রোজেন তৈরি বন্ধে সাহায্য করে। বায়ো-ইম্যুনোথেরাপির মাধ্যমে রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে, ইমিউনোলজিক সেল তৈরি করা হয়। এরপর সংগৃহীত রক্ত রোগীর শরীরে আবার প্রবেশ করিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো হয়। এটি ক্যানসার কোষকে সরাসরি ধ্বংস করে মেটাস্টিসিস রোধ করে।
অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল