ভালো থাকুন
যকৃৎ সুস্থ রাখতে
রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান, ইউরিয়া, বিলিরুবিন, পিত্তরস, প্রয়োজনীয় অসংখ্য রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয় যকৃৎ থেকে।
যকৃৎ বা লিভার মানবদেহের একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের সব ধরনের বিপাকক্রিয়া সম্পাদিত হয় এতে। শর্করা, ভিটামিন, খনিজ লবণ জমা থাকে এখানে। প্রয়োজনীয় নানা ধরনের আমিষ সংশ্লেষিত হয় এখান থেকে। রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান, ইউরিয়া, বিলিরুবিন, পিত্তরস, বিভিন্ন প্রাণরসের বাহক আমিষ, শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অসংখ্য রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয় যকৃৎ থেকে। সুতরাং অঙ্গটি সুস্থ রাখা জরুরি।
■ অতিরিক্ত চিনি, সরল শর্করা, ফ্রুকটোস জাতীয় কর্ন সিরাপ লিভারের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যে চিনির পরিমাণ কমাতে হবে। সোডা, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি ইত্যাদি থেকে রসনা সংযত রাখতে হবে।
■ সব সময় প্রাকৃতিক লেবেল লাগানো দাওয়াই নিরাপদ না–ও হতে পারে। নানা ধরনের হারবাল বা আয়ুর্বেদি ওষুধ যকৃতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।
■ স্থূলকায় ব্যক্তিদের হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সঙ্গে অতিরিক্ত চর্বি এসে জমা হয় যকৃতে। এর ফলে হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। এটি বর্তমান বিশ্বের বড় স্বাস্থ্যসমস্যা। ফ্যাটি লিভার থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস। সুতরাং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বিদায় দিন অতিরিক্ত চর্বি। কোমল পানীয়, সম্পৃক্ত চর্বি লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
■ হাত ধোয়ার অভ্যাস অনেক রোগব্যাধির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। খাবার খাওয়ার আগে, মলত্যাগের পর, পোষা প্রাণী স্পর্শের পর অবশ্যই হাত পরিষ্কার করতে হবে। এর মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ, ই–সহ অসংখ্য ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
■ অপরিচ্ছন্ন হোটেল–রেস্তোরাঁ হচ্ছে খাদ্যবাহিত জীবাণুর প্রধান উৎস। এসব হোটেল–রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে অনেকেই হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই দ্বারা আক্রান্ত হন। সুতরাং নিরাপদ পানি ও খাবার খেতে হবে।
■ অকারণে ভিটামিন গ্রহণ করা যাবে না। বিশেষত ভিটামিন এ যদি বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি লিভারের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া অনেক ওষুধই লিভারের জন্য ক্ষতিকর বিশেষত ব্যথানাশক, অতিরিক্ত প্যারাসিটামল, ঘুমের ওষুধ। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ নয়।
■ হেপাটাইটিস বি এবং সি লিভারের ভয়ানক শত্রু। সিরোসিস ও ক্যানসার সৃষ্টির পেছনে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হেপাটাইটিস বি এবং সি ছড়ায় মূলত রক্ত, লালা, বীর্য, যোনিরস ও গর্ভফুলের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, ব্লেড, ক্ষুর, এমনকি টুথব্রাশ থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে। আক্রান্ত মায়ের গর্ভের সন্তান সহজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। অসংযত যৌনাচার, নেশার সামগ্রী নেওয়ার জন্য একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, নিরাপদ যৌনাচারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নেশা থেকে দূরে থাকুন।
■ হেপাটাইটিস এ এবং বি এর প্রতিরক্ষায় টিকা আছে। টিক নিন।
■ দীর্ঘদিন অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া ধূমপান, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ লিভারের জন্য ক্ষতিকর। ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক, রাসায়নিক সার, খাদ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থ ও প্রিজারভেটিভ লিভারের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা