হাত কচলানোর ৭টি উপকারিতা
বাংলা অভিধানে ‘হাত কচলানো’ অর্থ ‘দুই করতল ক্রমাগত ঘষে মিনতি করা বা প্রার্থনা করা’। হাত কচলানোকে চাটুকারিতার লক্ষণ হিসেবেও ধরা হয় সমাজে। কাজেই শিরোনাম দেখে যে অনেকের ভ্রু কুঁচকে গেছে, সন্দেহ নেই। তবে এটা তো আমরা জানি, হাত কচলানোর ইতিবাচক দিকও আছে। দুই হাতের তালুর ঘর্ষণে তাপ উৎপন্ন হয় বলে শীতে আমরা প্রায়ই হাত কচলাই। কেবল উষ্ণতা নয়, হাত কচলানোর সঙ্গে আমাদের মানসিক সুস্থতারও গভীর সম্পর্ক আছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক হাত কচলানোর আরও কিছু উপকারী দিক।
মন ভালো রাখে
হাত কচলালে হাতে রক্তপ্রবাহ ও শক্তি সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা পর্যায়ক্রমে আপনার মনকে প্রফুল্ল করে। মানসিকভাবে ক্লান্ত বোধ করলে, কোনো কাজে মন বসাতে না পারলে কিছুক্ষণ দুই হাতের তালু ঘষে নিন, এতে মনোযোগ ফিরে আসবে, চিন্তাশক্তির উন্নতি ঘটবে।
দুশ্চিন্তা কমায়
হাতে হাত ঘষার ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রশান্তি এনে দেয়। এতে মন শান্ত থাকে, শরীরে ক্লান্তির ছাপ কম পড়ে। হাতে হাত ঘষার কারণে যে ছন্দময় গতির সৃষ্টি হয়, তাতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারলে কিছুক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তা ভুলে থাকা সম্ভব।
আবেগকে বশ মানায়
যোগশাস্ত্র অনুযায়ী, মানুষের দেহ সাতটি ভিন্ন ভিন্ন চক্রে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি হলো ‘হৃদয় চক্র’। হাতে হাত ঘষার কারণে যে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয়, তা হৃদয় চক্রকে প্রভাবিত করে। মানবদেহের এ চক্র আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত। হৃদয় চক্রকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে আপনার ‘ইমোশোনাল ব্লকেজ’ বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। ইমোশোনাল ব্লকেজ হলো রাগ, দুঃখ, ভয়ের মতো কিছু অনুভূতি, যা আমরা সহজে বুঝতে বা প্রকাশ করতে পারি না। এসব নেতিবাচক অনুভূতি আমাদের মনের ভেতর আটকে থাকে, আমাদের সহজে খুশি হতে বা মানসিক শান্তি অনুভব করতে দেয় না। এসব অনুভূতি ঠিক যেন একটা গিঁট বাঁধা দড়ির মতো, যা খুলে ফেলতে পারলেই শান্তি। হাত কচলানোর মতো অতি সাধারণ কাজটি নিয়মিত করলে আপনার মানসিক প্রতিবন্ধকতা দূর হবে, আগের চেয়ে বেশি মানসিক শান্তি পাবেন।
শক্তি বাড়ে
চীনে বহুকাল ধরে চর্চিত প্রাকৃতিক চিকিৎসাব্যবস্থায় ‘চিউ’ বলে একটি বিষয়ের কথা বলা হয়। চিউ অর্থ মানসিক ও শারীরিক শক্তি, যা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। হাতের তালু ঘষার মাধ্যমে শরীরে এই চিউয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা শরীরে সঞ্চিত শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে। হাত ঘষার কারণে উৎপন্ন তাপ আমাদের অনুভূতিগুলোকেও জাগ্রত করে, শক্তি বৃদ্ধি পায়।
উষ্ণতা মেলে
যাঁদের হাত ও আঙুল অবশ–অসাড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য হাতে হাত ঘষার অভ্যাসটি বেশ উপকারী ও আরামদায়ক। বিশেষ করে শীতে এ অভ্যাস বেশ স্বস্তিদায়ক। এতে হাতের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, হাত উষ্ণ থাকে, জড়তা দূর হয়।
ঘুমের উন্নতি হয়
হাত কচলানোর কারণে আপনার স্নায়ুতন্ত্রে একধরনের প্রশান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এ অনুভূতি আপনার শরীর ও মনকে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত করে। ঘুমের আগে আগে হাত কচলানোর অভ্যাস করতে পারেন। এর ফলে প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে হাত কচলালে আপনার মস্তিষ্ক একে ঘুমিয়ে পড়ার সংকেত হিসেবে ধরে নেবে।
শরীর ও মনের দৃঢ় সংযোগ
হাত কচলালে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং যে তাপ আমরা পাই, তা মনোযোগ বাড়ায়, আমাদের অনুভূতিগুলোকে সজাগ রাখে। এতে শরীর ও মনের সংযোগ হয় আরও দৃঢ়। শরীর ও মনের প্রয়োজনগুলো দ্রুত বুঝতে পেরে সে অনুযায়ী সাড়া দেওয়াও সম্ভব হয় এর ফলে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া