ইনহেলার সম্পর্কে ছয়টি ভুল ধারণা
অ্যাজমা বা হাঁপানির চিকিৎসায় নানান ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই রোগ থেকে ভালো থাকার এক মোক্ষম হাতিয়ার ইনহেলার। তবে অনেকের মনে হাঁপানি এবং ইনহেলার নিয়ে কিছু ভুল ধারণা আছে। জেনে নিন বিস্তারিত...
১. ইনহেলারের নেশা হতে পারে
হাঁপানি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। সম্পূর্ণভাবে সারে না। তবে ইনহেলার ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ইনহেলার হাঁপানি রোগীদের সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে দূর করে। আবার দীর্ঘ মেয়াদের ইনহেলারও আছে। এই ইনহেলার আপনার সমস্যা দীর্ঘ মেয়াদে নিরাময় করতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে নেশার কোনো বিষয় নেই। যেমন একজন ব্যক্তি ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সারা জীবন খেয়ে যান, তেমনই হাঁপানিতে ইনহেলার নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
২. ইনহেলারের স্টেরয়েড শরীরের জন্য ক্ষতিকর
ইনহেলারে স্টেরয়েড থাকে নামমাত্র। এটুকু স্টেরয়েড আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বরং ইনহেলারে থাকা স্টেরয়েড হাঁপানি রোগীর কষ্ট কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
৩. ওষুধ খেলে ইনহেলারের চেয়ে বেশি লাভ
এটিও ভুল ধারণা। কারণ, মুখে ওষুধ খেলে তা প্রথমে পেটে যায়, তারপর কিছু প্রক্রিয়া শেষে তা কাজ শুরু করে। কিন্তু ইনহেলার সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ ওষুধটা সরাসরি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর ফলে কাজ শুরু হয় দ্রুত। তা ছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধের চেয়ে ইনহেলারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম।
৪. হাঁপানির বড়সড় সমস্যায় ইনহেলার কাজ করে না
একেবারেই ভুল তথ্য। ইনহেলার শুধু যে তাৎক্ষণিক সমস্যাতেই কার্যকর তা নয়, বরং সারা জীবনই তা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নানান পরিস্থিতিতেই কাজ করে ইনহেলার।
৫. হাঁপানি সেরে যায়
না, একেবারেই ভুল। হাঁপানি কখনোই পুরোপুরি নিরাময় হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্য মাঝেমধ্যে এই রোগের কারণে খুব বেশি ভুগতে হতে পারে। তবে এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে সহজেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
৬. গর্ভাবস্থায় ইনহেলার গ্রহণ করা নিরাপদ নয়
কেউ কেউ মনে করেন, গর্ভাবস্থায় ইনহেলার ক্ষতিকর। তবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এ ধরনের আশঙ্কা বাতিল করা হয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ইনহেলার বরং গর্ভাবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হাঁপানির তীব্রতা কমাতে এবং ফুসফুসের কাজের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। মাতৃগর্ভে থাকাকালে শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য অক্সিজেনের নিয়মিত সরবরাহ থাকা প্রয়োজন, যা মায়ের রক্ত থেকেই পায় শিশু। এ জন্য গর্ভবতী মায়ের ফুসফুস সঠিকভাবে কাজ করা খুব জরুরি। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীর হাঁপানি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক।
ডা. মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম: জুনিয়র কনসালট্যান্ট, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা