আমাদের চারপাশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অল্প বয়সেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ডায়াবেটিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক। এটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং নানা রকম জটিলতার সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘমেয়াদি ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, স্নায়বিক জটিলতা, কিডনি অকার্যকারিতাসহ নানা প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে সারা জীবন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত ফলোআপের তিনটি অংশ রয়েছে। এক. রক্তে শর্করা ও অন্যান্য মাত্রা সঠিক আছে কি না, তা জানা; দুই. কোনো জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তা খুঁজে দেখা; তিন. ডায়াবেটিস সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে জানা। এ তিন উদ্দেশ্য সফল করতে যা করা যেতে পারে—
এক. তিন থেকে ছয় মাস অন্তর রক্তে শর্করার গড় বা এইচবিএওয়ান সি পরীক্ষা করা উচিত। এর মাত্রা ৭–এর নিচে থাকা ভালো। তা না হলে বুঝতে হবে, শর্করা নিয়ন্ত্রণে নেই এবং হয়তো চিকিৎসাপদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। এর সঙ্গে ফলোআপে রক্তচাপ মাপতে হবে। বছরে একবার রক্তে ক্ষতিকর চর্বি পরিমাপ করা উচিত। সেই সঙ্গে দরকার ওজন পরিমাপ করা এবং বিএমআই হিসাব করা। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। রোগী নিজে বাড়িতে সপ্তাহে এক দিন বা দুই দিন নিজের শর্করা পরীক্ষা করবেন। খালি পেটে এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর। এই পরিমাপ চার্ট করে রাখবেন। খালি পেটে সুগার ৬ মিলিমোল বা এর কম এবং খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোল বা এর কম থাকা বাঞ্ছনীয়।
দুই. ডায়াবেটিস–সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে। ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য আতঙ্কের নাম কিডনি অকার্যকারিতা। কিডনি কেমন কাজ করছে, তা জানার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষাই যথেষ্ট নয়। বছরে এক বা দুবার প্রস্রাবের অ্যালবুমিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে মাইক্রোঅ্যালবুমিন বা অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন অনুপাত পরীক্ষা করা। চিকিৎসক তাঁর কক্ষেই পায়ের স্নায়ু ও রক্তনালির সুস্থতা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। বছরে অন্তত দুবার চোখের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রেটিনাসহ চোখ পরীক্ষা করা উচিত। ফ্যাটি লিভার ডায়াবেটিসের সঙ্গে তাই মাঝেমধ্যে যকৃত পরীক্ষা করা উচিত। বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির হৃদ্রোগ আছে কি না, তা–ও জানা উচিত।
তিন. নিয়মিত ফলোআপের একটি বড় অনুষঙ্গ হলো নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষিত করে তোলা। খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ইনসুলিন ও গ্লুকোমিটারের ব্যবহার, জটিলতা হলে কী করণীয় (যেমন হাইপোগ্লাইসমিয়া হলে কী করবেন) ইত্যাদি বিষয়ে চিকিৎসককে প্রশ্ন করুন ও বিস্তারিত জেনে নিন। চিকিৎসকের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জেনে নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করুন, এই জ্ঞান আপনাকে ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে হলে নিয়মিত এসব পর্যবেক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
ডা. তানজিনা হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল