কারও কারও কেন সারা বছরই পা ফাটে
শীতে অনেকেরই পা ফাটে। এই মৌসুমে পানি কম খাওয়ার কারণে শরীর ডিহাইড্রেট থাকে, তা ছাড়া বাতাসে আর্দ্রতাও কম থাকে বলে অনেকে এই সমস্যায় ভোগেন। তবে কেউ কেউ শুধু শীতকালে নয়, পা ফাটার সমস্যায় ভোগেন বছরজুড়েই। কেন? এর পেছনে থাকতে পারে বিভিন্ন শারীরিক ও বাহ্যিক কারণ। জেনে রাখুন কারণ ও করণীয়।
১. চর্মরোগসহ ত্বকের নানা সমস্যা
পামোপ্লান্টার কেরাটোডার্মা নামের বংশগত রোগের কারণে হাত–পায়ের চামড়া ফেটে যেতে পারে।
অসংক্রামক চর্মরোগ সোরিয়াসিসের ফলে পায়ের তালুতে পুরু, খসখসে চামড়ার স্তর তৈরি হতে পারে। এর ফলে পরবর্তীকালে ত্বক ফেটে যায়।
একজিমা ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে, যা পরে হাইপারকেরাটোসিসে রূপ নিতে পারে এবং পা ফেটে যেতে পারে।
ইকথায়োসিসও একটি বংশগত রোগ, যা ত্বক পুরু ও শুষ্ক করে তোলে। এর ফলে ত্বক ফেটে যেতে পারে।
লাইকেন প্ল্যানাস একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত ত্বকের রোগ, যা ত্বক পুরু ও খসখসে করতে পারে।
২. পুষ্টির ঘাটতি
ভিটামিন এ, ই, সি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব থাকলে ত্বক রুক্ষ হতে পারে ও ফাটতে পারে।
আয়রন ও জিংকের ঘাটতিও ত্বককে শুষ্ক ও দুর্বল করে তোলে।
৩. বেশি পানি ও সাবান ব্যবহার
যাঁরা বারবার গরম পানি বা তীব্র রাসায়নিকযুক্ত সাবান ব্যবহার করেন, তাঁদের পায়ের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়, ফলে পা ফাটতে পারে।
৪. রোগ
ডায়াবেটিস: রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। ফলে পায়ের চামড়া শুষ্ক ও পুরু হয়ে যেতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজম: কম বিপাকক্রিয়া ও রক্ত সঞ্চালনের কারণে পায়ের ত্বক পুরু ও শুষ্ক হতে পারে।
কিডনি ও লিভারের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা: যেমন পালমার কেরাটোসিস, যা হাত-পায়ের ত্বক পুরু করে তুলতে পারে।
৪. যান্ত্রিক কারণ
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা হাঁটলে পা ফাটার ঝুঁকি থাকে। ক্রীড়াবিদ, শ্রমজীবী মানুষ, যাঁরা অনেকক্ষণ হাঁটেন বাঁ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
শক্ত, আঁটসাঁট জুতা পরলে পায়ের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে ফেটে যেতে পারে।
উঁচু হিল বা খালি পায়ে হাঁটার ফলে চাপের অসম বণ্টনের কারণেও চামড়া পুরু হয়ে যেতে পারে।
পায়ের গঠনগত ত্রুটির থাকলে কিছু জায়গায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা হাইপারকেরাটোসিসের কারণ হতে পারে।
৬. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, যা পা ফাটার অন্যতম কারণ এটি।
সমাধান ও প্রতিরোধ
প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
গরম পানিতে পা না ভিজিয়ে কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ ও অলিভ অয়েল দিয়ে পা পরিষ্কার করুন।
নরম ও আরামদায়ক জুতা পরুন, খুব শক্ত বা আঁটসাঁট জুতা এড়িয়ে চলুন।
পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খান, বিশেষ করে ভিটামিন এ, ই ও ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার।
ডা. সিনথিয়া আলম, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌন বিভাগ, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা