চোখের কর্নিয়ায় আঘাত

চোখ

চোখের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কর্নিয়া হচ্ছে চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ। এটি আইরিশ ও পিউপিলকে ঢেকে রাখে। পিউপিল হলো আইরিশের মাঝখানের ছিদ্র, যা ছানিমুক্ত চোখে কালচে দেখায়। ছানির পরিপক্বতার মাত্রা অনুসারে এটি ধূসর বা সাদা দেখায়। স্বাভাবিক দৃষ্টির জন্য কর্নিয়া স্বচ্ছ থাকা জরুরি। স্বচ্ছ থাকলে এর ভেতর দিয়ে আলো চোখের ভেতরে প্রবেশ করে পেছনে রেটিনার ওপর পড়তে পারে। তখন আমরা কোনো বস্তু দেখতে পাই। কর্নিয়ায় আঘাত পেলে দৃষ্টির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

যেভাবে কর্নিয়ায় আঘাত লাগে

নখের আঁচড়, কাটার সময় নখ ছিটকে চোখে লাগা, কলম বা পেনসিলের খোঁচা লাগা, ঝালাইয়ের কাজের সময় কোনো ধাতবকণা ছিটকে চোখে লাগা, চোখ প্রচণ্ডভাবে চুলকানো, চোখে কোনো রাসায়নিক পদার্থ পড়া, কৃষিকাজের সময় ধান-গমজাতীয় ফসলের ধারালো অংশের আঘাত—এমন অসংখ্য কারণে কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চোখে আঘাত লাগলে নিজে থেকে কোনো ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেবেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কীভাবে বুঝবেন

কর্নিয়ায় আঘাত লাগলে চোখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে চোখে ব্যথা, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি। মনে হতে পারে, চোখের ভেতর কিছু একটা রয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করতে বা পলক ফেলতে ব্যথা বেড়ে যায়। কর্নিয়ার আঘাত গুরুতর হলে চোখ বন্ধ করা যায় না।

করণীয়

রাসায়নিকের কারণে কর্নিয়া আঘাত পেলে সঙ্গে সঙ্গে বেশি করে পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রাসায়নিক বস্তু ছাড়া অন্য যেকোনো পদার্থ চোখে ঢুকলে দু–একবার পানি দিয়ে ধুয়ে দেখতে হবে, পদার্থটি বেরিয়ে আসে কি না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবশ্যই চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে প্যাড ও ব্যান্ডেজের সাহায্যে চোখের বিশ্রাম দিতে হবে। চোখে আঘাত লাগলে নিজে থেকে কোনো ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেবেন।

এই রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না করালে তা আরও গভীর হয়ে চোখে ছিদ্র হতে পারে। এতে রোগী হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি। সমস্যার কারণে কর্নিয়ায় একধরনের অস্বচ্ছতা বা দাগ সৃষ্টি হয়। এ কারণে ভালোভাবে দেখা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সতর্কতা

পেশাগত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। তবে কাজের সময় অবশ্যই নিরাপত্তামূলক চশমা পরে নিতে হবে। ধুলাবালু বা ক্ষুদ্র কণা ওড়ে (যেমন নির্মাণকাজ)—এমন স্থানে সুরক্ষামূলক চশমা পরতে হবে।

  • অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা