ঘুমানোর আগে কেন গরম দুধ খাবেন
দুধ ছাড়া সুষম খাদ্যতালিকা অসম্পূর্ণ। অনেকেই সকালে আবার অনেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ খেয়ে থাকেন। দিনের ঠিক কোন সময়ে দুধ খেলে উপকার বেশি, সে সম্পর্কে রয়েছে অজ্ঞতা। অথচ সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে দুধ খেলে এর পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।
ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়া
আমরা সচরাচর রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধ খাই। রাতে ঘুমানোর আগে দুধ তাঁরা খাবেন, যাঁদের ঘুমের সমস্যা আছে। দুধে ট্রিপটফেন এবং মেলাটোনিন আছে। ট্রিপটফেন শরীরে সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে এবং সেরোটোনিন স্নায়ুকে শান্ত রাখে, দুশ্চিন্তা দূর করে। যার ফলে দ্রুত ঘুম আসে। আর মেলাটোনিন ‘জৈবিক ঘড়ি’ নামে পরিচিত, যা আমাদের ঘুমচক্র নিয়ন্ত্রণ করে। আর হালকা গরম খাবারও স্নায়ুকে শান্ত রাখে এবং দ্রুত ঘুম আসতে এবং ভালো ঘুমের জন্য উপকারী।
সকালে বা বিকেলে দুধ খাওয়া
যাঁরা ওজন কমাতে চান, আবার দুধের পুষ্টিগুণও চান, তাঁরা সকালে বা বিকেলে দুধ খাবেন। কারণ, দুধে আছে ন্যূনতম ১২০ ক্যালরি আর ঠিক ঘুমানোর আগে দুধ খেলে ক্যালরি খরচ হয় না, যার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অন্যদিকে দুধ অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার, যার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিনসহ নানা পুষ্টি। সকালে বা বিকেলে হাঁটার পর বা হালকা শারীরিক ব্যায়াম করার পর দুধ খেলে ওজনও কমবে এবং সঠিক পুষ্টিগুণও পাওয়া যাবে।
ডায়াবেটিক রোগীদের দুধ খাওয়া
দুধে রয়েছে ল্যাকটোজ, যা শর্করা। অনেকে ভাবেন, এটি খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমিষ ও ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে এক কাপ দুধ ডায়াবেটিক রোগীরা খেতেই পারেন। এ ছাড়া চিনি ও ফ্যাটমুক্ত দুধও পাওয়া যায়, যা ডায়াবেটিক মিল্ক হিসেবে পরিচিত।
কলা, আম ইত্যাদি দিয়ে মিশিয়ে দুধ খাচ্ছেন?
আমরা অনেকই দুধের সঙ্গে কলা, বাদাম বা আম মিশিয়ে খেয়ে থাকি। কিন্তু দেখা গেছে, দুধের সঙ্গে এসব খাবার মেশালে হজমে সমস্যা হয়। সুতরাং এসব খাবার মিশিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তা ছাড়া এতে রক্তে শর্করা বাড়তে পারে।
দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে খাওয়া প্রসঙ্গে
যাঁদের রক্তে চর্বি আছে অথবা ডায়াবেটিক রোগী তাঁরা অনেকেই দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে দুধের সঙ্গে পানি মেশালে এর পুষ্টিগুণ কমে যায়। চর্বিবিহীন দুধ খেতে চাইলে দুধের ওপরের সর ফেলে দিয়ে খেতে হবে।
শিশুদের গরু বা ছাগলের দুধ খাওয়া প্রসঙ্গে
২ বছরের নিচের শিশুদের গরু বা ছাগলের দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, গরু বা ছাগলের দুধে অনেক বেশি প্রোটিন ও চর্বি থাকায় শিশুরা হজম করতে পারে না। ফলে পরিপাকতন্ত্রে রক্তপাতসহ কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে।
৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধের বিকল্প নেই। তাই এই বয়স পর্যন্ত আর কোনো কিছুর দরকার নেই।
শিশু দুধ খাওয়ার পর অবশিষ্ট দুধ ফ্রিজে রেখে বা গরম করে বাচ্চাকে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এতে দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
ডা. শিমু আক্তার, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক বিভাগ, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর।