রক্তচাপ কম হলে কী খাবেন 

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা নানা কারণে হতে পারে
প্রতীকী ছবিতে মডেল হয়েছে আক্কাস মাহমুদ, ছবি: সুমন ইউসুফ

একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিমি মার্কারি। অন্যদিকে রক্তচাপ ৯০/৬০ মিমি মার্কারির নিচে হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। রক্তচাপ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া দুটিই স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর।

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা নানা কারণে হতে পারে। যেমন দুশ্চিন্তা, গর্ভাবস্থা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পানির ঘাটতি, রক্তস্বল্পতা, পুষ্টির অভাব, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি। নিম্ন রক্তচাপ থাকলে মাথাঘোরা, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড়, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া এবং স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে অসুবিধা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতায় যা খাবেন

পর্যাপ্ত তরল: শরীর পানিশূন্য হয়ে গেলে রক্তের ঘনত্ব কমে যায়, এতে কমে যায় রক্তচাপ। তাই পর্যাপ্ত পানিসহ অন্যান্য তরল যেমন স্যুপ, কফি, ফলের রস, ডাবের পানি, ঘোল, দুধ; লবণ ও চিনি দিয়ে লেবুর শরবত ইত্যাদি পান করার মাধ্যমেই রক্তচাপ বাড়তে থাকে।

লবণ: আমরা জানি, লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। কারণ, এতে সরাসরি সোডিয়াম থাকে। তবে অনেকেই পানিতে শুধু লবণ গুলে খান; যা ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে দুই চা–চামচ চিনির সঙ্গে এক চা–চামচ লবণ মিশিয়ে পান করলে ভালো।

স্যালাইন: নিম্ন রক্তচাপে খাবার স্যালাইন সবচেয়ে উপযোগী ও তাৎক্ষণিক ফলদায়ক। তাই রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন পান করুন। লবণপানির থেকেও স্যালাইন ভালো কাজ করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে এমন খাবার: মূলত রক্তস্বল্পতা দূর করে এমন সব খাবারই রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। আয়রন, ভিটামিন সি, বি১২ ও ফলেট রক্তল্পতার জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি–উপাদান। লেবুজাতীয় ফল, শাক, মেটে আলু, মসুর ডাল ও সিদ্ধ ডিমে থাকে ফলেট। টক ফলে আছে ভিটামিন সি। এ ছাড়া গরু ও মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডাল, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, লালশাক, পালংশাক, কচুশাক, শিমের বিচি, মিষ্টিকুমড়ার বিচি ও শুকনা ফল আয়রনের ভালো উৎস। এসব খাবারে সোডিয়ামের মাত্রাও কিছুটা বেশি থাকে।

বিটের রস: বিটে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই বিটের জুস রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

স্যুপ: চিকেন, বিফ, সবজি, ডাল বা যেকোনো সু৵পে সোডিয়ামের  মাত্রা বেশি থাকে। সু৵প রান্নায় যেকোনো সস ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন টমেটো সস, সয়া সস ইত্যাদি। কারণ, সসে প্রচুর সোডিয়াম থাকে।

টক ফল: অনেকে মনে করেন, টক ফল খেলে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে। কিন্তু টক ফলে ভিটামিন সির পাশাপাশি থাকে গুরুত্বপূর্ণ সব মিনারেল ও ভিটামিন। যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক; যা সোডিয়ামের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন টক ফল, যেমন কমলা, মাল্টা, লেবু ইত্যাদি দ্রুত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।

মাখন: সোডিয়ামের দারুন উৎস। তাই মাখন দিয়ে বাদাম ভেজে খান। বাটার মিল্ক দিয়ে নোনতা বিস্কুট খান। পনির, আচার ও নোনতা বিস্কুট সোডিয়ামের ভালো উৎস। রক্তচাপ কম থাকলে খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো পরিমাণমতো রাখা যেতে পারে।

ক্যাফেইন: কড়া কফি, হট চকলেট অর্থাৎ যেকোনো কড়া ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। আর যাঁরা অনেক দিন ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা সকালে ভারী নাশতার পর এক কাপ কড়া ক্যাফেইন–সমৃদ্ধ পানীয় রাখতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন, যেসব খাবার দ্রুত রক্তে মিশে যায়, রক্তচাপ কমে গেলে সে রকম খাবার কম খাবেন।


জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড ওয়েলনেস সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা