পেপটিক আলসার রোগে জীবনাচরণ 

পেপটিক আলসার ডিজিজ (পিইউডি) পরিপাকতন্ত্রের একটি পরিচিত রোগ। আমাদের চারপাশে অনেকেই এ সমস্যায় ভুগছেন। পাকস্থলীতে যখন অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন সেখানে ক্ষত বা প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটাই হচ্ছে আলসার। পাকস্থলীতে হলে একে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হলে তাকে ডিওডেনাল আলসার বলে। তবে এই ক্ষতের আরেকটি প্রধান কারণ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এই ব্যাকটেরিয়া দূষিত খাদ্যের মাধ্যমে প্রবেশ করে। 

যেকোনো বয়সেই এই ক্ষত দেখা দিতে পারে। তবে সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।

কারণ 

■ খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম, অতিরিক্ত তেল–মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ। ধূমপান বা মদ্যপান।

■ বিভিন্ন প্রদাহবিরোধী ওষুধ নিয়মিত সেবন। মানসিক চাপ, কম ঘুম।

লক্ষণ 

■ পেটে জ্বালাপোড়া, অসহনীয় ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া। 

■ বমি বমি ভাব, রক্তবমি, কালো পায়খানা, শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমা ইত্যাদি। 

করণীয়

লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে পরিবর্তন এনে অনেকটাই ভালো থাকা যায়। এ জন্য প্রয়োজন—

■ নরম ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া। ঝাল–মসলাযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার না খাওয়া।

■ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যাবে না। সারা দিনের খাবারকে ছয়-আটবার ভাগ করে খেতে হবে।

■ পেটে গ্যাস হয়, এমন খাবার বাদ দিতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান ছাড়তে হবে। চা, কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার এড়াতে হবে। ননিবিহীন ও ল্যাকটোজমুক্ত দুধ, দই অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে। 

■ তাজা ফল ও সবজি খাবার তালিকায় রাখতে হবে। যেমন আপেল, আঙুর, কলা, ডালিম ইত্যাদি।

■ টকজাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। যেমন কমলা, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি।

■ সবজির মধ্যে নরম শাক, লাউ, চালকুমড়া, পেঁপে, বাঁধাকপি, গাজর, আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে।

■ প্রতিদিনের খাবারে ডিম, নদীর বা সামুদ্রিক মাছ, মুরগির মাংস (চর্বি ছাড়া/চামড়া ছাড়া) থাকতে পারে।

■ প্রক্রিয়াজাত খাবার, টিনজাত খাবার, ভাজা বাদাম ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। 

■ শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে ভাত, নরম খিচুড়ি, সুজি, সাগু, বার্লি ইত্যাদি খাওয়া যায়।

মূল কথা হলো, সঠিক খাবার পরিকল্পনা ও সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চললে পেপটিক আলসার অবশ্যই প্রতিরোধ করা সম্ভব।


ফারজানা ওয়াহাব, পুষ্টিরোগবিশেষজ্ঞ