অস্থিসন্ধি সুস্থ রাখার উপায়

আমাদের দেহে ২০৬টি হাড় রয়েছে। দুটি হাড় বা অস্থি যেখানে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাকেই অস্থিসন্ধি বলে। অস্থি, মাংসপেশি ও লিগামেন্ট দিয়ে অস্থিবন্ধনী তৈরি হয়। লিগামেন্ট কিছুটা স্থিতিস্থাপক, শক্ত, সাদা বর্ণের বিশেষ ধরনের মাংসপেশি। এটি হাড়ের গাঁথুনিতে শক্ত রশির মতো কাজ করে। লিগামেন্ট ও মাংসপেশির জন্যই অস্থিসন্ধিতে হাড় শক্তভাবে লেগে থাকে।

শরীরে অনেক অস্থিসন্ধি রয়েছে; যেমন হাঁটু, ঘাড় ও কোমরের অস্থিসন্ধি। যেকোনো ধরনের নড়াচড়া, এমনকি শোয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয় অস্থিসন্ধি দিয়ে। শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ অস্থিসন্ধিগুলো সুস্থ রাখতে ছোটবেলা থেকেই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

করণীয়

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ওজন বাড়লে শরীরের ভার বহনকারী জয়েন্টগুলোতে চাপ পড়ে। ফলে জয়েন্ট ক্ষয় হতে থাকে। এতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

  • নিয়মিত ব্যায়াম করলে অস্থিসন্ধির চারপাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্ট শক্তিশালী হয় এবং ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। ব্যায়ামের ফলে ওজন কমে এবং অস্থির জয়েন্টের টান ও চাপ কমে।

  • শক্তিশালী পেশি জয়েন্টকে ভালো সাপোর্ট দিতে পারে। ঊরুর পেশি শক্তিশালী হলে হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। পেট ও পিঠের শক্তিশালী পেশি ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। ভারোত্তোলন পায়ের পেশি তৈরি করতে সাহায্য করে। পেশি ভালো রাখতে ইয়োগা উপকারী।

  • দাঁড়ানো, বসা বা শোয়ার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখুন। সঠিক দেহভঙ্গি পেশি ও লিগামেন্টের চাপ কমায়। তিন ঘণ্টার বেশি সময় পায়ের ওপর পা তুলে বসলে কাঁধ, কোমর ও পিঠের জয়েন্টে পরিবর্তন এবং ব্যথা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় উঁচু হিলযুক্ত জুতা পরা ঠিক নয়।

  • সুষম খাদ্যাভ্যাস জরুরি। ওজন কমাতে হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ হাড়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই স্থূলকায় ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন।

  • নিয়মিত ক্যালসিয়াম, আয়রন, আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার খান। এগুলো হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • প্রসূতি মায়েরা প্রসবের পর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

  • বিভিন্ন ধরনের মাছ ও মাছের তেল অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে কার্যকর। মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যদি অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে, তবে খাদ্যতালিকায় মাছের তেলের ওপর গুরুত্ব দিন। অস্থিসন্ধির ব্যথায় অনেক সময় গ্লুকোসামাইন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। হলুদ দেহের অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে কার্যকর। বাদামে আছে ম্যাগনেশিয়াম, আই-অ্যারজিনিন ও ভিটামিন ই; যা দেহের প্রদাহ দূর করতে কার্যকর। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, অ্যামন্ড ও অন্যান্য বাদাম রাখুন খাদ্যতালিকায়।

  • ক্যালসিয়াম দেহের হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দুধ, দই ও পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যাঁরা দুধজাতীয় খাবার খেতে পারেন না, তাঁরা যেসব সবজি ও বীজে ক্যালসিয়াম রয়েছে, সেসব খেতে পারেন।

  • অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, অর্থোপেডিক বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মগবাজার, ঢাকা