শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হওয়া কি খারাপ
দাঁত ওঠাকে অনেকে শিশুর বুদ্ধি বিকাশের একটি মাপকাঠি মনে করেন। তাই শিশুর দাঁত দেরিতে উঠলে চিন্তায় পড়ে যান অনেক অভিভাবক; যদিও দাঁত ওঠার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার কোনো সম্পর্ক নেই।
মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় ছয় সপ্তাহ থেকেই শিশুর দুধদাঁতের কুঁড়ি ওঠা শুরু করে। জন্মের পর ছয় মাস বয়সের কাছাকাছি সময়ে নিচের পাটির মাঝের দিকে প্রথম সেই দাঁত দেখা যায়। এরপর আস্তে আস্তে অন্য দুধদাঁতগুলো উঠতে থাকে। তবে প্রতিটি শিশুর বিকাশ অনন্য। তাই কারও কারও ক্ষেত্রে দাঁত ছয় মাসে না উঠে আরও দেরিতে উঠতে পারে। কখনো দেখা যায়, শিশুর দেড় বছর বা ১৮ মাস হয়ে গেছে, তারপর ও দাঁত উঠছে না। তখন বলা যায় যে শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দেরিতে দাঁত ওঠার কারণ
প্রথমেই আগে শিশুর পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে দেখতে হবে, বাবা বা মায়ের বংশে দেরিতে দাঁত ওঠার ইতিহাস আছে কি না। অনেক ক্ষেত্রেই দেরিতে দাঁত ওঠা বংশানুক্রমিক। সে ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
যেসব শিশু সময়ের আগেই, অর্থাৎ ৩৬ সপ্তাহ পূর্ণ করার আগেই অথবা কম ওজন নিয়ে জন্মায়, তাদের ক্ষেত্রেও দাঁত দেরিতে উঠতে পারে।
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি (রিকেটস), ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-সহ অন্যান্য অপুষ্টিজনিত সমস্যায়ও শিশুর দাঁত দেরিতে উঠতে পারে। মায়ের বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ানোর পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
পিটুইটারি ও থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের অভাবেও দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর দাঁত দেরিতে উঠতে পারে।
এ ছাড়া আরও বেশ কিছু জিনগত জটিলতায় শিশুর দাঁত দেরিতে উঠে থাকে।
দাঁত দেরিতে উঠলে জটিলতা
বয়স উপযোগী খাবারগুলো চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হওয়ার জন্য শিশুর অপুষ্টি এবং বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
শিশুর স্থায়ী দাঁতগুলো ভবিষ্যতে আঁকাবাঁকা হয়ে উঠতে পারে।
শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হলে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুর অন্যান্য বৃদ্ধি ও বিকাশের দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অপুষ্টি এবং হরমোনের সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক: বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর