নারী–পুরুষের জননাঙ্গে মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) কারণে আঁচিল হয়। এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা, অস্বস্তি ও চুলকানি। পুরুষ ও নারীদের জননাঙ্গের আশপাশে এক বা একাধিক গুচ্ছ আঁচিল দেখা দিতে পারে। পুরুষের তুলনায় নারীদের এই রোগে আক্রান্তের হার বেশি।
জননাঙ্গের আঁচিল নানা রূপে দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে সাধারণগুলো হচ্ছে ছোট, বিক্ষিপ্ত, একটু ফোলা। এ ছাড়া চামড়ার রং কালচে হয়ে যাওয়া, জননাঙ্গে একগুচ্ছ ফোলা অংশ, কুঁচকির কায়গায় চুলকানি ও অস্বস্তি বোধ করা, যৌন সংসর্গের সময় রক্তপাত ও পরে ব্যথা হতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে আক্রান্তের স্থান জননাঙ্গের ভেতরে ও মুখে, জরায়ু, গ্রীবা ও কুঁচকিতে হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গে, অণ্ডথলি, ঊরু বা কুঁচকিতে হতে পারে।
এইচপিভি আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে আঁচিলের সংক্রমণ সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ছড়ানোর মাধ্যম হচ্ছে যৌন সংসর্গ। খুব অল্প বয়সে যৌনাচারে সক্রিয় হয়ে উঠলে বা একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে অরক্ষিত অবস্থায় যৌন সংসর্গে লিপ্ত হলে ঝুঁকি বেশি। সংক্রমিত মায়ের সন্তান জন্মের সময় শিশুর দেহেও সংক্রমিত হতে পারে।
ত্বক বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করেন। কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হবে, সেটা নির্ভর করে আঁচিলের ধরনের ওপর। কয়েক সপ্তাহ ধরে আঁচিলের জায়গায় ক্রিম বা তরল ব্যবহার করা হয়। জননাঙ্গে আঁচিলের চিকিৎসায় পেডোফাইলোটক্সিন করা হয়। এই চিকিৎসা আঁচিলের বৃদ্ধি রোধ করতে ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভালো রাখে। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ক্রায়োথেরাপিও করা যায়। ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে সাধারণত প্রতি সপ্তাহে একবার করে চার সপ্তাহের জন্য তরল নাইট্রোজেন দিয়ে আঁচিলকে জমিয়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কেটে ফেলা বা অস্ত্রোপচার এবং ইলেক্ট্রোকটারির মাধ্যমে আঁচিল সরিয়ে দেওয়ার চিকিৎসাও রয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা হলো লেজার ট্রিটমেন্ট। লেজারের মাধ্যমে আঁচিল নষ্ট করে দেওয়া যায়।
এইচপিভি সংক্রমণের চিকিৎসা না করালে সারাভাইকাল ক্যানসার এবং জননাঙ্গে ক্যানসার হতে পারে। এইচপিভি প্রতিরোধে প্রত্যেক কিশোরীকে টিকা নিতে হবে যা আঁচিল ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে। যৌন সংসর্গের সময় প্রতিবার কনডম ব্যবহার করা সংক্রমণ এড়ানোর সর্বোত্তম উপায়।
ডা. জাহেদ পারভেজ: চেয়ারম্যান, জাহেদ’স অ্যান্ড হেয়ার স্কিনিক হাসপাতাল লিমিটেড, পান্থপথ, ঢাকা