আয়ুর্বেদিক ওষুধ নিয়ে একটি ব্যাখ্যা
প্রথম আলোর অনলাইনে ১৭ মে ‘আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ভেষজ উপাদান খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?’ শিরোনামে ডা. শিমু আক্তার একটি নিবন্ধ লিখেছেন।
প্রকাশিত লেখায় ‘আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক স্বীকৃত নয়’ বলা হয়েছে। অথচ ১৯৮২ সালে ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স জারি হওয়ার পর থেকে অ্যালোপ্যাথি ওষুধের ন্যায় আয়ুর্বেদ, ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক ও হারবাল (ভেষজ) ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছ থেকে উৎপাদন লাইসেন্স নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ওষুধের নিবন্ধন করতে হয়। বর্তমানে দেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদিত দুই শতাধিক আয়ুর্বেদিক ও ৩২টি হারবাল (ভেষজ) ওষুধ তৈরির শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রতি দুই বছর অন্তর এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করে এবং ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করে।
২
প্রতিবেদনে আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ সেবনে লিভার, কিডনিসহ মানবদেহের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আয়ুর্বেদ প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র সমাদৃত একটি চিকিৎসাব্যবস্থা। ভারতের আয়ুশ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ অনুষদে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসব ওষুধ বাজারজাত করা হয়। কোথাও আয়ুর্বেদ ও ভেষজ ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অধিকন্তু আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। নিরাপদ, ব্যয়সাশ্রয়ী ও কতিপয় ইতিবাচক সুবিধার বিষয় বিবেচনা করে আয়ুর্বেদসহ ভেষজ ওষুধের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহারের প্রতি তারা গুরুত্ব আরোপ করেছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে আয়ুর্বেদ ওষুধ, ভেষজ এবং ভেষজ উপাদানের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বহু গবেষণা হয়েছে, যে সম্পর্কে লেখক হয়তো অবহিত নন।
৩
বাংলাদেশে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে বিএএমএস আয়ুর্বেদিক ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বোর্ড কর্তৃক ২৭টি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দিচ্ছে। জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় তাঁরা অবদান রাখছেন।
ডা. মো. মিজানুর রহমান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন
ডা. শিমু আক্তারের বক্তব্য
ডা. মো. মিজানুর রহমানের প্রতিক্রিয়া পড়ে মনে হচ্ছে, আমার লেখার কিছু অংশ জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। বিষয়গুলো তাই স্পষ্ট করছি।
১. আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত সত্য, কিন্তু রাস্তাঘাটে যেগুলো বিক্রি হয়, সেগুলো অনুমোদিত নয়। সেসব ওষুধ বা যাঁরা সেগুলো বিক্রি করেন, তাঁদের দ্বারা প্রতারিত হন সাধারণ মানুষ। সেসব ওষুধের কথাই আমার লেখায় বলা হয়েছে। তবে লেখায় তা স্পষ্ট না হওয়াতেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
২. আয়ুর্বেদ ও ভেষজ ওষুধ নিরাপদ, এটা যেমন ঠিক, তেমনি এ কথাও ঠিক যে রাস্তাঘাটে অনভিজ্ঞ মানুষ না জেনেশুনে এমন অনেক ভেষজ ওষুধ প্রদান করেন, যার অনেকগুলোতে ক্ষতিকারক উপাদান যেমন সিসা, পারদ ও আর্সেনিক বিদ্যমান। তাই না জেনেশুনে ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
৩. আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ সেবনের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সঙ্গে আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আমার আগের লেখায় অস্পষ্টতার কারণে যেসব বিষয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তা এখানে স্পষ্ট করা হলো। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য ডা. মো. মিজানুর রহমানকে ধন্যবাদ।