আপনি কি টয়লেটে ১০ মিনিটের বেশি সময় কাটান?
অনেকেই ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যাওয়ার সময় মোবাইলটাকে সঙ্গী করে নিতে ভোলেন না। ‘বড় কাজটা’ করতে করতে মেইলগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেন। হোয়্যাটসঅ্যাপের মেসেজগুলোর উত্তর দেন। রিলস দেখেন। অনেকের টয়লেটে ঢুকে পড়েছে নেটফ্লিক্সও! কারও কারও জন্য সেই সময়টাই দিনের একান্ত ‘মি টাইম’। এদিকে সময়টাকে কাজে লাগানোর বাহানায় হিতে হচ্ছে বিপরীত!
কতক্ষণ টয়লেটে থাকা উচিত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্টোন ব্রুক মেডিসিনের ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ সেন্টারের পরিচালক ডা. ফারাহ মঞ্জুর জানান, সাধারণভাবে তিন থেকে পাঁচ মিনিটেই কাজ হয়ে যায়। তবে কারও কারও পাঁচ থেকে আট মিনিটও সময় লাগতে পারে। তবে কোনোভাবেই টয়লেটে ১০ মিনিটের বেশি সময় কাটানো উচিত নয়।
বেশিক্ষণ টয়লেটে থাকলে কী হয়?
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি আমাদের মাটির দিকে টেনে ধরে রাখে। একই কারণে দেহের নিচের অংশ থেকে রক্ত টেনে ওপরে তুলতে হৃৎপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। দেহের নিম্নাংশের অনেকখানি বসার মতো ভঙ্গিতে কমোডে ঢুকে থাকে, যা সোফা বা চেয়ারে বসার ভঙ্গি থেকে ভিন্ন। এমন অবস্থায় মলনালি নিম্নগামী থাকে। ফলে দেহের নিম্নাংশ থেকে রক্ত টেনে তোলা হৃৎপিণ্ডের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। আর এর প্রভাব পড়ে রক্তচাপে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টারের কোলোরেক্টাল সার্জন ডা. লাই ঝু বলেন, এই অবস্থায় রক্ত নিচের দিকে বেশি সঞ্চালিত হয় আর ওপরে দিকে উঠতে বেগ পেতে হয়। ফলে মলদ্বার ও মলনালির আশপাশে থাকা রক্তের শিরা–উপশিরা ধমনি রক্তচাপে স্ফিত হয়ে থাকে। যা মলদ্বার থেকে রক্তপড়া, শ্রোণিদেশের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, পাইলস বা অর্শরোগের ঝুঁকিসহ ডেকে আনে নানা জটিলতা।
এই চিকিৎসক আরও জানান, যখন রোগীরা এই ধরনের সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই রোগীদের বেশি সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকার ইতিহাস রয়েছে।
টয়লেটে আপনি যখন হাঁটুর ওপর ভর করে কুঁজো হয়ে বসে মোবাইল দেখেন, তখন মেরুদণ্ড ও পার্শ্ববর্তী পেশিগুলোয় চাপ পড়ে, ধীরে ধীরে শুরু হয় অস্বস্তি। ব্যথা হয় পিঠে ও কাঁধে। প্রথম প্রথম সমস্যাটি অতটা প্রকট না হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
এ ছাড়া রাজ্যের সব ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তাই টয়লেটে বেশি সময় কাটানোর চিন্তা মাথায়ই আনা যাবে না। আর আপনার যদি স্বাভাবিকভাবেই টয়লেটে ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগে, এর মানে আপনি ইতিমধ্যে কোষ্টকাঠিন্য বা অন্য রোগে আক্রান্ত।
হতে পারে ক্যানসারও!
দীর্ঘসময় কমোডে বসে থাকার ফলে যদি মলাশয়ের ভেতরে শিরা বা কোনো কিছু বেড়ে ফুলে যায়, তবে মলপ্রবাহের গতি বাধাগ্রস্ত হয়। যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে।
সম্প্রতি আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি জানিয়েছে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকেই ৫৫ বছরের কম বয়স্কদের ভেতর কোলন ক্যানসারের হার ঊর্ধ্বমুখী। আর এর অন্যতম কারণ টয়লেটের কমোডে অধিক সময় ব্যয় করা!
সূত্র: সিএনএন