বিশ্বব্যাপী ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ প্রতিবছর মাথাব্যথায় অন্তত একবার আক্রান্ত হন। এতে মানুষের কর্মক্ষমতা ও গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়।
মাইগ্রেন
১১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এ রোগ আছে। মেয়েদের মাইগ্রেন বেশি দেখা যায়। সাধারণত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাইগ্রেনের লক্ষণ হলো মাথার যেকোনো অংশে ব্যথা, একবার এক পাশে ব্যথা হলে পরে অন্য পাশে ব্যথা হতে পারে। ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যথা স্থায়ী হতে পারে। রক্তনালি সংকোচন বা প্রসারণ বা টনটন প্রকৃতির ব্যথা অনুভূত হয়। এ সময় কোনো কাজ করা যায় না। আলো বা শব্দে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। সঙ্গে বমি বা বমি ভাব হতে পারে। অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকলে ব্যথা কমে।
টেনশন টাইপ হেডেক
দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এমন মাথাব্যথা হয়। মাথার মাংসপেশির সংকোচনের কারণে এই ব্যথা হয়। লক্ষণ হচ্ছে মাথাজুড়ে ব্যথা। ব্যথা মাইগ্রেনের মতো তীব্র হয় না। কাজের সময় ব্যথা বোঝা যায় না। কাজ শেষে মাথাব্যথা ফিরে আসে। এই মাথাব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
ক্লাস্টার হেডেক
ক্লাস্টার হেডেক তুলনামূলকভাবে অনেক কম দেখা যায়। শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের এ ধরনের মাথাব্যথা হয়। পুরুষের মধ্যে এ ধরনের ব্যথার প্রকোপ বেশি। ক্লাস্টার হেডেক ক্ষণস্থায়ী কিন্তু বারবার হয়। বেশ তীব্র ব্যথা হয়। চোখের চারপাশে বা পেছনে ব্যথা হয়। চোখ লাল হয়ে যায় ও পানি পড়ে। চোখের ওপরের পাতা পড়ে যেতে পারে। প্রতিদিন একই সময়ে বা দিনে কয়েকবার ব্যথা হয় এবং কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
এসব সমস্যা প্রাথমিক ব্যথার সমস্যা। ব্যথার দ্বিতীয় পর্যায়ে শারীরিক বিভিন্ন রোগের কারণে হতে পারে। যেমন—মস্তিষ্কের আবরণী প্রদাহ (মেনিনজাইটিস), সাইনুসাইটিস, মাসটয়েডাইটিস, মস্তিষ্কের টিউমার, রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, মাথায় আঘাত ইত্যাদি।
প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যথার চিকিৎসা দুই স্তরের। তাৎক্ষণিক নিরাময়ের জন্য বেদনানাশক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। আর প্রোফাইলেকটিক চিকিৎসার অর্থ বারবার মাথাব্যথা যেন না হয় এবং ব্যথার তীব্রতা যেন কম থাকে, সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন। কিছু অভ্যাসও পরিবর্তন করতে হবে। অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, চা-কফি পান, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন, রোদ বা অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি মাথাব্যথার কারণ।
দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যথায় সাধারণত যে কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে, সে কারণের চিকিৎসা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা