ভয় পেলে বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে অনেকেরই হাত কাঁপে। অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতার কারণেও হাত কাঁপতে পারে। কিন্তু অকারণে মাত্রাতিরিক্ত হাত কাঁপলে হাতের সূক্ষ্ম কাজগুলো, যেমন লেখালেখি কিংবা সেলাই করা, জামাকাপড় পরার মতো কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কারণ
মানসিক দুশ্চিন্তা।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ (সালবিউটামল, থিওফাইলিন) সেবনে হাত-পা কাঁপতে পারে।
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, যেমন এ হরমোনের আধিক্য হলে হাত কাঁপে। তবে এ ক্ষেত্রে রোগীর ওজন মাত্রাতিরিক্ত কমে যায়।
এসেনশিয়াল ট্রেমর আরেকটি কারণ। বংশগত এ রোগে হাত-পা কাঁপার সঙ্গে মাথাও কাঁপে।
পারকিনসন একধরনের স্নায়ুরোগ, যেখানে রোগীর হাত কাঁপার সঙ্গে হাঁটাচলার গতি ধীর হয়ে যায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
হাত কাঁপা রোগের কারণ নির্ণয়ে রোগীর রোগের ইতিহাস ভালো করে জানতে হবে। দুশ্চিন্তার জন্য বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যদি হাত কাঁপে, তবে কোনো পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
অন্যান্য ক্ষেত্রে রোগীর রক্তশূন্যতা অথবা থাইরয়েড পরীক্ষা করা উচিত। পারকিনসন রোগ ধারণা করলে মস্তিষ্কের এমআরআই পরীক্ষা করা যেতে পারে।
চিকিৎসা
চিকিৎসা শুরুর প্রথমেই রোগের কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করুন। কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হাত কাঁপলে তা বন্ধ রাখতে হবে।
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন ও ভালো ঘুম হাত কাঁপার অন্যতম চিকিৎসা।
প্রোপ্রানলজাতীয় ওষুধ হাত-পা ও মাথা কাঁপার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।
হরমোনের রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু ওষুধ বা রেডিও আয়োডিন চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোন রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পারকিনসন রোগে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। প্রোসাইক্লিডিনজাতীয় ওষুধ পারকিনসন রোগের জন্য হাত কাঁপার সমস্যাকে কমাতে পারে। কিন্তু এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা যাবে না।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাত কাঁপার সমস্যা চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যেসব হাত-পা কাঁপা রোগী ওষুধে ভালো হন না, তাঁদের জন্য বর্তমানে দেশে-বিদেশে ডিবিএস নামক একধরনের শল্যচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, যা অত্যন্ত কার্যকর। হরমোন বা স্নায়ুরোগের জন্য হাত কাঁপলে অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. নাজমুল হক মুন্না: সহকারী অধ্যাপক (নিউরোলজি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা