জ্বর বা অসুস্থতার পর অনেকেরই ঠোঁটের কোণে ঘা হয়। কারও আবার এমনিতেই হতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় এ রোগকে অ্যাঙ্গুলার চিলাইটিস বলে। ঠোঁটের দুই কোণে কিংবা এক কোণে ফাটা ঘায়ের মতো দেখা যায়। শীতকালে এ রোগ বেশি হয়।
জ্বর, সর্দি–কাশি বা ভাইরাস সংক্রমণের পর কারও কারও মুখে ঘা হয়। এ ছাড়া ঘা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পান, সুপারি, জর্দা, সাদাপাতা বা তামাক অনেক দিন ধরে খাওয়া, মুখে গুল দেওয়ায় এ সমস্যা হতে পারে। বয়স্ক মানুষ যাঁরা মুখে ডেনচার ব্যবহার করেন বা তাঁদের মুখের কোণে ত্বক ঝুলে গিয়ে আঘাতের কারণে ঠোঁটের কোণে ঘা হতে পারে। কারও কারও মুখের শুষ্কতায় ঠোঁটের কোণে ফেটে গিয়ে ঘা হয়।
ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক ঠোঁটের ফাটা অংশে প্রবেশ করে, ব্যথার সৃষ্টি করে ও ঘা হয়। এ ছাড়া অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা, ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা পড়া, মুখে ছত্রাকের সংক্রমণ, আঁকাবাঁকা দাঁত, ত্বকের অ্যালার্জি, শিশুর আঙুল চোষা, দীর্ঘ সময় মুখে মাস্ক পরে থাকলেও ঠোঁটের কোণে ঘা হতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বা অন্ত্রের প্রদাহ রোগ, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, শরীরে ভিটামিন বি, আয়রন বা প্রোটিনের ঘাটতি, দ্রুত ওজন কমা, বার্ধক্যজনিত সমস্যা, ধূমপান বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে এ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ভিটামিন ডি-১২, নিয়াসিন বি-৩, থায়ামিন/এনিউরিন বি-১, ফলিক অ্যাসিড বি-৯–এর অভাবে মূলত এ রোগ হয়।
লক্ষণ
অ্যাঙ্গুলার চিলাইটিস হলে ঘায়ের সঙ্গে রক্তপাত, ফোসকা, ত্বক ফেটে যাওয়া, খসখসে, লালচে রং, ফোলা ভাব ও চুলকানি হতে পারে। ঘা হলে রোগীর কিছু খেতে গেলে লালা ঝরে। সাধারণত গরম ঝালযুক্ত খাবার একেবারেই খেতে পারেন না।
প্রতিকার
অ্যাঙ্গুলার চিলাইটিস কী কারণে হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা। অ্যান্টিবায়োটিক ও ত্বকে ব্যবহারের মলম ঘা কমাতে সহায়তা করে।
দাঁতে ডেনচার ঠিকভাবে সেট করাও জরুরি।
খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন বি-জাতীয় ওষুধও চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে পারেন।
অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা টপিক্যাল স্টেরয়েড ঠোঁটের ফাটা কোণে ফোলা ভাব ও ব্যথা উপশম করে।
চিকিৎসকের পরামর্শে ঠোঁটের কোণে বরফ দিতে পারেন।
এ সময় মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এতে ব্যথা, ফোলা ও জ্বালাপোড়া কমবে। রোদ ও খুব ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকা দরকার। ত্বকের অ্যালার্জি হয়, এমন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন ও প্রচুর পানি পান করবেন। ঠোঁট আর্দ্র রাখতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যায়। ধূমপান বা তামাকজাত পণ্য, পান, সুপারি, জর্দা এড়িয়ে চলুন। বারবার ঠোঁট জিব দিয়ে ভেজানোর অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে।
ঘা গুরুতর না হলে চিকিৎসা শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসা না করালে ত্বকে দাগ পড়তে বা ত্বক পাতলা হতে পারে। চিকিৎসার পরও আবার দেখা দিতে পারে রোগটি। কারও ক্ষেত্রে এ ঘা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এমনকি সারা জীবন এ অবস্থা চলতে পারে। তাই চিকিৎসা নেওয়াও জরুরি।
ডা. জাহেদ পারভেজ, ত্বক ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক হাসপাতাল লি., পান্থপথ, ঢাকা