নারীর শরীরে এই পুরুষ হরমোন বেড়ে গেলে কী হয় জানেন?

প্রতি ১০ নারীর একজন পিসিওএসে আক্রান্ত (প্রতীকী ছবি)
ছবি: কবির হোসেন

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস) মেয়েদের খুবই পরিচিত হরমোনজনিত একটি রোগ। যেকোনো বয়সী নারীর এ রোগ হতে পারে। কিন্তু কৈশোর ও প্রজননক্ষম বয়সে এটি বেশি হতে দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, প্রতি ১০ নারীর একজন পিসিওএসে আক্রান্ত।

পিসিওএস শনাক্ত করার নানা উপায় আছে। তার আগে জানা যাক, এটি কেন হয়। মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। এ কারণে দেখা দেওয়া কিছু উপসর্গের সমষ্টিগত রূপই হলো পিসিওএস। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরও কিছু হরমোন, জিন ও পরিবেশগত সমস্যার মিলিত প্রভাব রয়েছে।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, এই পুরুষ হরমোনের জন্য ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু পরিপক্ব হতে পারে না বলে তা সিস্ট হিসেবে ডিম্বাশয়ে জড়ো হয়। আলট্রাসনোগ্রাম করলে এ রকম অনেক সিস্ট দেখা যায় বলেই রোগটিকে পলিসিস্টিক ওভারি বলা হয়।

উপসর্গ

  • অনিয়মিত ঋতুস্রাব।

  • মুখ ও শরীরের অন্যান্য অংশে অবাঞ্ছিত পশম।

  • ঘাড়ের পেছনে কালো দাগ।

  • ওজন বৃদ্ধি, লিভারে চর্বি জমা।

  • ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস।

  • উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেড়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতা।

পিসিওএস বন্ধ্যত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হরমোন। অপচিকিৎসা বা সময়মতো চিকিৎসা না করালে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। তা ছাড়া জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।

রোগনির্ণয়

সময়মতো রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিলে উল্লিখিত সমস্যাগুলো সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। কিশোরীদের মাসিকের গন্ডগোল দেখা দিলে বা মুখে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দিলে, দ্রুত হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

  • রক্ত পরীক্ষায় হরমোনের মাত্রার বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন ও তলপেটের একটি আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে সহজে এ রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। রক্তে পুরুষ হরমোন বা টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, তা জেনে নিতে হবে। দরকার হলে টেস্টোস্টেরনের বিভিন্ন ধরনও পরীক্ষা করতে হতে পারে।

  • অনিয়মিত মাসিকের হরমোনজনিত অন্যান্য কারণ, যেমন থাইরয়েড বা প্রলেকটিন এবং সন্দেহ হলে কর্টিসোলসহ আরও কিছু হরমোন পরীক্ষা করতে হতে পারে। সেই সঙ্গে আনুষঙ্গিক রক্তের শর্করা, চর্বি বা লিভারের এনজাইম ইত্যাদি পরীক্ষা করা উচিত।

সঠিকভাবে রোগনির্ণয়ের পর ওজন হ্রাস, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ রোগ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

  • ডা. মারুফা মোস্তারী, সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়