গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেখা যায় এবং সন্তান প্রসবের পর সেরে যায়। তবে এটি ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
কারণ
গর্ভধারণের প্রথম দিকে হরমোন প্রোল্যাকটিন, হিউম্যান প্লেসেন্টাল ল্যাকটোজেন ও করটিসোলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়; যা মায়ের ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এতে তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রাথমিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্ট থাকতে পারে। সে জন্য প্রত্যেক অন্তঃসত্ত্বা নারীর শুরুতে একবার ও ২৪-২৮ সপ্তাহে একবার রক্তে শর্করা পরিমাপ করতে হবে। কখনো কখনো অতিরিক্ত তৃষ্ণা, বারবার প্রস্রাব, ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি, মাড়ির ইনফেকশন বা দাঁতের সমস্যা, ওজন কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সংক্রমণ, চুলকানি, ত্বকের সংক্রমণ ইত্যাদি এমন ডায়াবেটিসের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়।
ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে কিছু গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যেমন:
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরে অতিরিক্ত শর্করা শিশুতে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে শিশুর জন্মকালীন ওজন বেশি হতে পারে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
নবজাতকের হাইপোগ্লাইসেমিয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, জন্মগত ত্রুটি বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, প্রি–একলাম্পশিয়া, একলাম্পশিয়ার ঝুঁকি বেশি।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে গর্ভপাত বা প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো, যেমন তাজা ফল ও শাকসবজি, গোটা শস্য (যেমন: ব্রাউন রাইস, ওটস) এবং স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (যেমন: মুরগির মাংস, মাছ, ডাল)।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রক্তে শর্করা পরিমাপ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। এবং একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
ইনসুলিন
যদি খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে চিকিৎসক ইনসুলিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। ইনসুলিন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ চিকিৎসা।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ