ডায়াবেটিক রোগী অসুস্থ হলে কী করবেন
জ্বর, বমি, ডায়রিয়া বা যেকোনো অসুস্থতায় অন্যদের তুলনায় একজন ডায়াবেটিক রোগীর পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিগুলো হলো, রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে বা কমে যাওয়া এবং পানিশূন্যতা। অসুস্থ হলে প্রথমেই ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কেমন আছে, সেটা আগে দেখে নিতে হবে।
রক্তে শর্করা যদি বেশি হয় (১১ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি) তাহলে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানিশূন্যতা না হয়। প্রচুর পানি পান করাতে হবে, প্রয়োজন হলে হাসপাতালে গিয়ে নরমাল স্যালাইন দিতে হবে। স্যালাইনের গতি কেমন হবে, তা রোগীর রক্তচাপ, ইসিজি বা ক্রিয়েটিনিন না জেনে বাসায় কখনো দেওয়া উচিত নয়।
আর যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৪ মিলিমোল/লিটারের কম হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন সাময়িকভাবে বন্ধ বা কমিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে রোগীকে গ্লুকোজ বা চিনি গুলিয়ে শরবত খাওয়াতে হবে। রোগী যদি মুখে খেতে না পারেন বা যদি অচেতন হয়ে যান, তাহলে মুখে কিছু জোর করে খাওয়াতে যাবেন না। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিন। শিরায় গ্লুকোজ স্যালাইন দিয়ে আবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। প্রয়োজন হলে দুই-তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হবে।
বাড়িতে যাঁরা আছেন, তাঁরা লক্ষ করুন, দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করে এমন কোনো ওষুধ তিনি নিচ্ছেন কি না। গ্লিক্লাজাইড, গ্লিবেনক্লামাইড, গ্লিমেপিরাইড এ ধরনের ওষুধ বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। বমি ডায়রিয়া হলে মেটফরমিন ওষুধটিও এ সময় বন্ধ করতে হবে। পানিশূন্যতা হতে পারে বলে অসুস্থতার সময় এম্পাগ্লিফ্লোজিন জাতীয় ওষুধও বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদি ইনসুলিন সবচেয়ে ভালো।
৭০/৩০ বা ৫০/৫০ অনুপাতে যেসব মিক্সড ইনসুলিন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা ভালো। দিনে একবার যে ব্যাসাল ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে, সেটা কম মাত্রায় দেবেন। কম সময় ধরে কাজ করে এমন ওষুধ (রিপাগ্লিনাইড) এবং ইনসুলিন এ সময় ব্যবহার করা যাবে। যদি অরুচি থাকে, তাহলে রোগী যদি দৈনিক চাহিদার মোটে অর্ধেকটা খাবার খান, তাহলে ওষুধের মাত্রাটি হবে পূর্বের মাত্রার অর্ধেক। যদি খাবার খান দুই–তৃতীয়াংশ, ওষুধের মাত্রা হবে দুই–তৃতীয়াংশ এবং সব ক্ষেত্রেই রক্ত পরীক্ষা করতে হবে গ্লুকোমিটারে। নিজে নিজে পরীক্ষা করবেন সকালে খালি পেটে, নাশতার দুই ঘণ্টা পর, দুপুরে খাবারের দুই ঘণ্টা পর ও রাতে খাবারের দুই ঘণ্টা পর। এই চার্ট নিয়ে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করবেন।
*ডা. রোজানা রউফ: সহযোগী কনসালট্যান্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা