বয়সী মা–বাবা রোজা রাখতে চাইলে যেসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
যে মানুষ একসময় সব ঝড়ঝঞ্জা সয়ে বুকে আগলে রেখেছেন পুরো পরিবারকে, আজ তাঁকে আগলে রাখার পালা। একটা বয়সে পৌঁছানোর পর শরীর যেমন আগের মতো সবল থাকে না, তেমনই নানা রকম রোগবালাইও দেখা দিতে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, বাতরোগ হয়ে পড়ে প্রবীণদের সঙ্গী। আবার পরিবারের বয়সী ব্যক্তিটি, যিনি সারা জীবন রোজা রেখেছেন, এখন সেই রোজা ভাঙতেও রাজি হন না। কিন্তু রোজা রাখলে কি বয়সী মানুষেরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন? ঝুঁকি কমাতে কীই–বা করতে পারেন আপনি? এ কারণেই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি সিয়াম সাধনা করলে তাঁর প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়।
রমজান মাসে পরিবারের বয়সী ব্যক্তি কী খাবেন, কখন খাবেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ইফতার, সাহ্রি থেকে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে পাচ্ছেন কি না, সেদিকে নজর রাখুন। তাঁর পছন্দের খাবার যেমন তৈরি করে দিতে হবে, তেমনই খেয়াল রাখতে হবে সার্বিক সুস্থতার দিকেও।
এই বয়সে ভাজাপোড়া খাবার খেলে হজমে গণ্ডগোল হতে পারে। তাই হালকা ও সহজপাচ্য খাবার রাখুন তাঁর জন্য। ইফতারের পরও কয়েক দফায় খাবার দিন। প্রতিবার খাবারের পরিমাণ রাখুন পরিমিত। তরল খাবারও দিন বারবার। দুধ, ডিম, ফলমূল ও শাকসবজি খেতে দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে। কখন কোন খাবার তিনি খেতে চাইছেন, এ বিষয়ে তাঁর মতামত নেওয়াও জরুরি। এই বয়সে সামান্য বিষয়েও তাঁরা অভিমান করতে পারেন, এটা অস্বাভাবিক নয়।
সাহ্রিতে এমন খাবার দিন, যা দীর্ঘ সময় শক্তি জোগাবে। সাহ্রি না খয়ে রোজা রাখা কখনোই সম্ভব নয় বয়সীদের পক্ষে। লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস দিয়ে তৈরি করা খাবার, শাক ও আঁশসমৃদ্ধ সবজির মধ্য থেকে বেছে নিন সাহ্রির খাবার। মাছ বা মাংসও রাখুন সাহ্রিতে। চাইলে দুধ বা দইও রাখতে পারেন খানিকটা।
ইফতারে খেজুর, কলা, আপেল, তরমুজ কিংবা টক ফল খাওয়া ভালো। ফলের রস দিয়ে পানীয়ও তৈরি করে দিতে পারেন। পানীয়তে সামান্য লবণ দিতে পারেন, তবে চিনি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
কোন ওষুধ কোন বেলায় খেতে হবে, সেটিও আগে থেকেই ঠিক করে দিন। ডায়াবেটিস থাকলে রমজান মাসের খাদ্যতালিকা ও ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত। রোজার মাসে দিনে খাওয়া হয় না বলে ডায়াবেটিসের ওষুধ লাগবে না, এমন ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। বরং এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে।
দিনের বেলায় বিশ্রাম নেওয়াই ভালো। অতিরিক্ত পরিশ্রমে পানিশূন্যতা হতে পারে। তবে সন্ধ্যার পর হালকা হাঁটাহাঁটি করতে উৎসাহ দিন।
রোজার সময় হঠাৎ শরীর খারাপ লাগলে রোজা ভেঙে খাবার খাইয়ে দেওয়াই ভালো। কোনো কারণে অসুস্থ হলে যেমন ডায়রিয়া, বমি বা জ্বর হলে সে সময় রোজা থেকে বিরত থাকা উচিত।
যাঁদের ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হৃদ্রোগ ইত্যাদি আছে, তাঁদের খাবারে বিধিনিষেধ আছে। দরকার হলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন আগে থেকেই।