নারীদের স্তন বা জরায়ুমুখ ক্যানসার নিয়ে কমবেশি আলোচনা হলেও জরায়ু বা ইউটেরাস বা মাতৃজঠরের ক্যানসার নিয়ে আলোচনা তেমন হয় না। কিন্তু উন্নত দেশে নারী প্রজননতন্ত্রের ক্যানসারগুলোর মধ্যে প্রধান হলো জরায়ু ক্যানসার। দিন দিন নিম্নবিত্তের দেশগুলোতেও এই ক্যানসারের হার বাড়ছে।
৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে এই ক্যানসার দেখা দিলেও প্রায় ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ৪০ বছরের আগেই নারীরা এই ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি এই ক্যানসারে হারাতে পারেন তাঁদের গর্ভধারণের সম্ভাবনা। গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০২৩ সাল থেকে জুনকে জরায়ু ক্যানসার সচেতনতার মাস ঘোষণা করা হয়েছে।
কাদের জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি
বয়স্ক ও স্থূল নারী যাঁরা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খান, যাঁরা পিসিওএসে আক্রান্ত, বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগছেন অথবা সন্তান কম, মেনোপজাল হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন, মাসিক কম বয়সে শুরু হয়েছে এবং বেশি বয়সে বন্ধ হয়েছে অর্থাৎ প্রজননক্ষম বয়সকাল বেশি, পরিবারে জরায়ু, স্তন ও কোলন ক্যানসারের ইতিহাস আছে—এমন নারীদের জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
উপসর্গ কী
মেনোপজের আগে নাকি পরে এ রোগ দেখা দিয়েছে, তার ওপর উপসর্গ নির্ভর করে। মেনোপজের আগে অনিয়মিত মাসিক, মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে সতর্ক হতে হবে। মেনোপজের পরে রক্তপাত বা মেনোপজ হওয়ার পরও মাসিকের মতো রক্তপাত, রক্তযুক্ত স্রাব, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, পায়খানা-প্রস্রাব অনিয়মিত হওয়া, পেটে চাপ অনুভব ইত্যাদি এই ক্যানসারের উপসর্গ।
কীভাবে রোগনির্ণয়
সন্দেহজনক উপসর্গ ও লক্ষণ দেখা দিলে গাইনি চিকিৎসক একটি ট্রান্স-ভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড বা যৌনাঙ্গের আলট্রাসনোগ্রাফি, প্যাপ স্মিয়ার করার পর চূড়ান্তভাবে রোগনির্ণয়ের জন্য ডিঅ্যান্ডসি অথবা হিসটেরোসকপির মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। পরে ক্যানসারের ধাপ নির্ণয়ের জন্য এমআরআইয়ের দরকার হতে পারে।
চিকিৎসা কী
রোগের ধাপের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ণয় করা হলেও মূল চিকিৎসা সার্জারি অর্থাৎ ডিম্বাশয়সহ জরায়ু ফেলে দেওয়া এবং ক্যানসার যেসব জায়গায় ছড়াতে পারে, সেগুলোকে অপসারণ করা। হতে পারে লসিকা গ্রন্থির অপসারণ, ওমেনটাম ফেলা ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রয়োজনভেদে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি লাগতে পারে। সন্তান ধারণের আগে যাঁরা এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন, নির্দিষ্ট শর্তপূরণ সাপেক্ষে তাঁদের জরায়ু রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব।
ডা. মোছা. ফারহানা তারান্নুম খান, স্ত্রীরোগ ও গাইনি অনকোলজি বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা