ফ্রোজেন শোল্ডারের কারণ

কাঁধে ব্যথার অন্যতম একটি কারণ, রোটেটর কাফ সিনড্রোম, যার একটি অংশ হলো ফ্রোজেন শোল্ডার। রোটেটর কাফ সিনড্রোমের অংশগুলো হলো ফ্রোজেন শোল্ডার, সুপ্রাস্পাইনেটাস টেন্ডিনাইটিস, বাইসেপস টেন্ডিনাইটিস, ইম্পিঞ্জমেন্ট টেন্ডিনাইটিস ও ক্যালসিপিক টেন্ডিনাইটিস।

৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। যেসব রোগ বা অবস্থার সঙ্গে এ রোগের সম্পর্ক আছে, সেগুলো হলো—হৃদ্‌রোগ, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা, থাইরয়েডের সমস্যা, হাইপারলিপিডেমিয়া। অস্ত্রোপচারের পর, যেমন নিউরোসার্জিক্যাল অপারেশন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

ফ্রোজেন শোল্ডারের সঠিক কোনো কারণ জানা নেই। এতে ফাইব্রোব্লাস্টিক প্রোলিফারেশন হয়, যা রোটেটর কাফ ইন্টারভেলে জমে বা কোরাকো এক্সোমিওন লিগামেন্ট ও অ্যান্টেরিওর লিগামেন্টে জমে। এতে ফাইব্রোসিস হয়ে লিগামেন্ট কন্ট্রাচার হয়। এ কারণে শোল্ডার মুভমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়। অনেক সময় রোগী শোল্ডার জমে গেছে বলে অভিযোগ করেন।

লক্ষণ

● হাত ওপরে ওঠাতে কষ্ট হয়।

● স্বাভাবিক কাজকর্মেও অনেক কষ্ট বা ব্যথা হয়ে থাকে, যেমন চুল আঁচড়ানো, চুল বাঁধা, জামাকাপড় পরা, গায়ে সাবান দেওয়া ইত্যাদি।

● কেউ অনেক কষ্টে শোল্ডার মুভমেন্ট না করে স্কোপিউলার মুভমেন্ট বা রোটেশন করে হাত একটু নাড়াতে পারেন।

রোগনির্ণয়

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ রোগ নির্ণয় করা কঠিন। ব্যথা অনেক থাকলেও এক্স-রেতে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। শুধু ব্যবহার না করার জন্য ‘ডিজইউজ হাইপোট্রফি অব বোন’ দেখা যেতে পারে।

এ রোগ তিনটি ধাপে স্বাভাবিক পর্যায় পার করে। সেগুলো হলো—সাব-অ্যাকিউট ফেজ, ক্রনিক ফেজ ও রোটেটর কাফ টিয়া। তিনটি পর্যায় পার হয়ে ১৮ মাসের মধ্যে সাধারণত আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায় এটি। কিছু আড়ষ্টতা থাকে, যা আরও ৬ থেকে ১২ মাস পর ভালো হয়।

অন্যান্য কিছু রোগের সঙ্গে এ রোগের বেশ মিল আছে, যেমন আঘাতের পর আড়ষ্টতা, হাড়ের সংক্রমণ, রিফ্লেক্স সিম্প্যাথেটিক সিনড্রোম।

চিকিৎসা

● কনজারভেটিভ: এ রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা ব্যথানাশক ওষুধ এবং কিছু ব্যায়াম, যেমন পেন্ডুলার এক্সারসাইজের পরামর্শ দেওয়া হয়। এক্সারসাইজ রোগী নিজে করবেন; কোমর নুইয়ে একদিকে কাত হয়ে। ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো বা গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরানোর মতো করে কাঁধের ব্যায়াম করতে হবে। সকাল-বিকাল ২০ থেকে ২৫ মিনিট এ ব্যায়াম করতে হবে।

● সার্জিক্যাল: যদি কনজারভেটিভ চিকিৎসায় কাজ না হয়, তবে লিগামেন্ট রিলিজ করে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ডা. মো. মাহবুব আলম, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল