ঈদযাত্রায় ঝুঁকি এড়াতে এই ১২ বিষয়ে সতর্ক থাকুন

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। মানুষের যাত্রা শুরু হচ্ছে শহর ছেড়ে গ্রামে, প্রিয়জনের কাছে। দূর পাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন গণপরিবহনে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করছে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় নানা ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট না পাওয়া, পথে যানজটে দুর্ভোগ, সময়মতো বাড়িতে না পৌঁছানো ইত্যাদি। এসব ভোগান্তির পাশাপাশি ঈদ ভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিশু, প্রবীণ ও রোগীদের পক্ষে লম্বা যাত্রাপথের ধকল সহ্য করা খুব কঠিন। তাই জেনে রাখুন, কী কী পদক্ষেপ নিলে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে।

ঈদ ভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। শিশু, প্রবীণ ও রোগীদের পক্ষে লম্বা যাত্রাপথের ধকল সহ্য করা খুব কঠিন
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

১. প্রথমত যেটা নিয়ে ভাবতে হবে, তা হলো, ব্যাগ গোছানো। আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে তাঁদের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা সঙ্গে রাখুন। দরকারি ওষুধপত্র হিসাব করে সঙ্গে নিন। একটা ফার্স্ট এইড ব্যাগও গুছিয়ে নিতে পারেন।


২. বাইরে প্রচণ্ড গরম। তাই আরামদায়ক ও সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক পরিধান করুন। যাত্রার সময় নরম জুতা, স্যান্ডেল অথবা কেডস পরার অভ্যাস করতে হবে। একেবারে নতুন জুতা পরে কোথাও রওনা দেবেন না। এতে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। নারীরা হাই হিলের জুতা এড়িয়ে চলুন।


৩. পথের জন্য ঘরে তৈরি খাবার ও পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর বিশুদ্ধ পানি পান করুন। শিশুদেরও পানি পান করতে উৎসাহিত করুন। এ সময় খাবার ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাইরের খাবার, ফলের জুস, চিপস, চকলেট ইত্যাদি শিশুকে খেতে দেবেন না।


৪. কিছু কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ, যেমন শরীরব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, ডায়রিয়ার জন্য খাবার স্যালাইন, সাধারণ সর্দি–কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, পেটব্যথা, পেট ফোলা বা গ্যাসের সমস্যার জন্য সঙ্গে ওষুধ রাখুন। এ ছাড়া তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলম সঙ্গে রাখুন। শিশুদের বিভিন্ন মেয়াদি অসুখ যেমন: বাতরোগ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতেও ভুলবেন না।

৫. যানবাহনে শিশুরা যেন জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বের করে না রাখে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।


৬. অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাস, ট্রেন বা লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করবেন না। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।


৭. শিশুরা সব সময় জানালার পাশে বসতে চায়। এতে অতিরিক্ত বাতাসের কারণে ভ্রমণের ঠিক পরই তারা আক্রান্ত হয় সর্দি-জ্বর অথবা সাধারণ কাশিতে। তাই শিশুদের জানালার পাশে বসা থেকে বিরত রাখুন। ঝাঁকুনির সময় শিশুকে শক্ত করে ধরে রাখবেন।

৮. অনেক শিশুই বাসে বা যানবাহনে উঠলে বমি বমি ভাব হয়। অনেকে বমি করেও ফেলে। সঙ্গে মাথা ঘোরার সমস্যাও থাকতে পারে, যাকে বলে ভ্রমণজনিত ‘মোশন সিকনেস’। যাত্রা শুরুর ৩০ মিনিট আগে ট্যাবলেট বা সিরাপ অটোসিল অথবা স্টিমিটিল জাতীয় ওষুধ খাওয়ালে এই অসুবিধা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাসে, ট্রেনে চলাচলের সময় শিশুদের চোখ বন্ধ করে রাখলে অথবা ঘুমিয়ে পড়লে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

৯. অন্তঃসত্ত্বা নারীরা অতিরিক্ত ঝাঁকুনির পথে ভ্রমণ সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন। অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাস এবং সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময়ের এক মাস আগে থেকে ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই ভালো। গর্ভাবস্থায় একাকী ভ্রমণ করবেন না।

১০. বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় যাত্রাপথে তাঁরা যেন একই অবস্থায় বেশিক্ষণ বসে না থাকেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বয়স্কদের প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ যেমন ইনহেলার, ইনসুলিন, উচ্চরক্তচাপের ওষুধ ইত্যাদি সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।


১১. জরুরি প্রয়োজনে পরিচিত চিকিৎসক ও ভ্রমণরত এলাকার থানার ফোন নম্বর সঙ্গে রাখুন। অসুস্থ হলে অথবা কোনো বিপদে পড়লে যেন দ্রুত সাহায্য নিতে পারেন। পুলিশের সাহায্য নিতে যেকোনো জায়গা থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই সুবিধা মিলবে।

১২. অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান। যাত্রাপথে অপরিচিত কেউ খাবার বা পানি দিলে খাবেন না। যাত্রাপথে মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীর আনাগোনার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।


গন্তব্যে পৌঁছে পরিমিত খাবার খাবেন। তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, বেশি করে পানি খান। শাকসবজি খাবেন। অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অকারণ রোদে ঘোরাফেরা করবেন না। পারতপক্ষে বাইরের খাবার খাবেন না। বাড়িতে প্রিয়জনের সঙ্গে গল্প, আড্ডা, খাওয়াদাওয়ায় ঈদের আনন্দে মেতে উঠুন।

লেখক: ডা. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক, শিশু বিভাগ (বিএসএসএমইউ)।