মাম্পস শিশুদের একটি পরিচিত সংক্রামক ব্যাধি। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। প্যারামিক্সো ভাইরাস শ্রেণির অন্তর্গত আরএনএ ভাইরাসে এ রোগ হয়। প্যারোটিড গ্রন্থি ফোলার দুই দিন আগে থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত রোগী এর জীবাণু ছড়াতে সক্ষম থাকে। তবে এ রোগের কোনো বাহক থাকে না। এটা বেশি ঘটে শীতের শেষ ও বসন্তকালে। মাম্পস মূলত ছড়ায় আক্রান্ত রোগীর সরাসরি সংস্পর্শ, কাশি–হাঁচি কিংবা লালা-প্রস্রাব ইত্যাদির মাধ্যমে।
লক্ষণ
শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশের ১২-২৫ দিনের মাথায় উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতে জ্বর, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমি ও বমি ভাব দেখা দেয়। এ সময় খিদেও লোপ পায়।
মাম্পসের প্রধান লক্ষণ হলো এক পাশে প্যারোটিক লালাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিশুর এভাবেই মাম্পস দেখা যায়। প্যারোটিড লালাগ্রন্থি ফোলার কারণে কানের সামনের ডান ও চোয়ালের উপরিভাগের অংশটি থাকে ফোলা, যা কখনো কখনো কানের লতিকে পেছনের দিকে ঠেলে রাখে। শিশুর খাবার গিলতে ও চিবোতে সমস্যা দেখা দেয়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অন্য পাশের প্যারোটিড গ্ল্যান্ডও ফোলে। পরে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লালাগ্রন্থি ফোলা কমে আসে।
জটিলতা
মাম্পসজনিত জটিলতার অন্যতম মেনিনজাইটিস। তবে এ জটিলতা তুলনামূলকভাবে মৃদু প্রকৃতির। কিন্তু মাম্পসজনিত সমস্যায় মস্তিষ্কে প্রদাহ বা অ্যানকেফালাইটিস হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এখানে প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র শিরঃপীড়া, আলোর দিকে তাকাতে না পারা ও ঘাড়ে শক্ত ভাব।
২৫ শতাংশ মাম্পস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অণ্ডকোষও ফোলে। এতে এক–তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে শিশুর অণ্ডকোষ শুকিয়ে যায়। তবে এতে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ততটা হ্রাস পায় না।
মাম্পস আক্রান্ত ৪ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ ঘটে। এতে করে কেউ কেউ ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
মাম্পস–পরবর্তী অন্যান্য জটিলতা হলো কিডনি, অস্থিসন্ধি প্রভৃতির প্রদাহ। কানে না শোনার অন্যতম প্রধান কারণও মাম্পস–পরবর্তী জটিলতা।
চিকিৎসা
মাম্পস সাধারণভাবে আপনা–আপনি সেরে যায়। এ অসুখের কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। সাধারণ ব্যবস্থাপনাই আসল। যেমন শিশুকে গরম পানিতে গড়গড়া করানো, নরম ও তরল খাবার দেওয়া এবং বেশি বেশি পানীয় পান করানো উচিত। জ্বর সারাতে প্যারাসিটামল।
শিশুকে লজেন্স চুষতে দিলে তা লালাগ্রন্থির রস নির্গত হতে সাহায্য করে, এতে করে লালাগ্রন্থির ফোলা তাড়াতাড়ি কমে আসে।
অণ্ডকোষ ফুলে গেলে বরফ প্যাক ব্যবহার করা যায়। ফোলা কমাতে ওষুধও ব্যবহার করা হয়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
মাম্পস আক্রান্ত শিশুর ১০ দিন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে না যাওয়া।
শিশুর ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে এক ডোজ এবং পরে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে আরেক ডোজ বুস্টার মাম্পস ভ্যাকসিন দেওয়া।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল