চোখে হঠাৎ বালু ঢুকলে কী করবেন
অনেক সময় ঝড়ো বাতাসে কিংবা কোনো কাজ করার সময়ে হঠাৎ চোখে বালু বা কিছু একটা ঢুকে পড়লে কী করবেন?
এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুকণাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘ফরেন বডি’। দুর্ঘটনাবশত চোখে যদি কোনো বহিরাগত বস্তুকণা ঢুকে কর্নিয়া বা চোখের পাতার ভেতরের অংশে গেঁথে যায়, তাহলে সেটা চোখের বিভিন্ন রকম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন চোখ খচখচ করা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পানি পড়া, চোখে ব্যথা এবং দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাওয়া। যদি চোখের পাতার ভেতরের অংশে বালুকণা গেঁথে থাকে, তাহলে পলক ফেলার সময় প্রতিবার তা চোখের সামনের স্বচ্ছ কর্নিয়াতে ক্ষত সৃষ্টি করে। এতে দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যায়। আমাদের কর্নিয়া স্বচ্ছ কাচের মতো। এর ওপরে পাতলা একটি স্তর থাকে যা বাইরের জীবাণু থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করে। যদি এ স্তরে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাহলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
চোখে বহিরাগত বস্তুকণা ঢুকে গেলে আমরা অবচেতনভাবে চোখের পাতা হাত দিয়ে ঘষতে শুরু করি। ঘর্ষণের ফলে ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। কাজেই প্রথম করণীয় হলো চোখে হাত না দেওয়া। কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে প্রথমে শান্ত, ধীরস্থিরভাবে কাজটি থামিয়ে সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকুন। এরপর চোখ খোলা রেখে অন্তত ১০-১৫ মিনিট ধরে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানির ঝাপটাতেই চোখের ওপর আলগাভাবে লেগে থাকা বালুর কণা পরিষ্কার হয়ে যায়। খেয়াল রাখতে হবে যাতে চোখে আর নতুন কোনো আঘাত না লাগে। যদি ওপরে উল্লিখিত উপসর্গ, অর্থাৎ, চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা, আলোতে চোখ খুলতে কষ্ট হওয়া, চোখে পানি পড়া ইত্যাদি থাকে, তাহলে বিলম্ব না করে চোখের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
এই বহিরাগত বস্তুকণা এবং এর দ্বারা সৃষ্ট কর্নিয়ার ক্ষত অতি সূক্ষ্ম হতে পারে যা খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ চোখে লেগে থাকা বালুকণার অবস্থান নির্ণয় করেন এবং প্রয়োজনে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে চোখে গেঁথে থাকা বালুকণা অপসারণ করে দেন। যদি কর্নিয়াতে ঘষা লেগে ওপরের স্তর উঠে যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন এবং অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা চোখের ড্রপ এবং ব্যথা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্ষত থাকলে চোখে পানি লাগানো যাবে না।
যদি দ্রুত চিকিৎসা না নেন, তাহলে কী হতে পারে? চিকিৎসা না নিলে কর্নিয়াতে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে, যা থেকে কর্নিয়া স্থায়ীভাবে ঘোলা হয়ে যেতে পারে অথবা আরও জটিল আকার ধারণ করে কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে অন্ধত্ব হতে পারে।
আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশে শুধু বালুকণা নয়, ধানমাড়াই করার সময় প্রায়ই ধানের কণা ছিটকে এসে চোখে লাগতে পারে। এটি চোখে ফাঙ্গাস সংক্রমণের একটি উৎস। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না নিলে অন্ধত্ব হতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার সময়ে চোখে চশমা ব্যবহার করতে হবে।
ডা. রেজিনা নোভা: বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর