থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। রক্তের ক্যানসারও নয়। এটি প্রতিরোধযোগ্য। থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী এক কথা নয়।
একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। তাই কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না, তা বাহ্যিকভাবে বোঝার কোনো উপায় নেই। তবে থ্যালাসেমিয়ার রোগী জন্মের ছয় মাস বয়স থেকে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। জন্ডিস দেখা দেয়, ঘন ঘন রক্ত নিতে হয়। পেটের প্লীহা ও লিভার বড় হয়ে যায়। ঠিকমতো শরীরের বৃদ্ধি হয় না।
মা–বাবা দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ার রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কীভাবে বুঝবেন বাহক কি না
থ্যালাসেমিয়া বাহকের কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় থ্যালাসেমিয়া বাহক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সন্দেহ হলে এরপর হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিস পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ডিএনএ অ্যানালাইসিস পরীক্ষা করা লাগে।
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা
রক্তস্বল্পতার জন্য ঘন ঘন রক্ত নিতে হয়। এতে শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে গেলে লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। তাই আয়রনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য আয়রন চিলেটর নিতে হয়।
নিয়মিত রক্ত দিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সঠিক চিকিৎসা করালে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হলেও সঠিক চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যাস্টেশন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
খাদ্য উপদেশ
থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবারের উপদেশ এক নয়। থ্যালাসেমিয়ার বাহকের খাবার স্বাভাবিক মানুষের মতো। আয়রনজাতীয় খাবারের নিষেধ নেই। বরং আয়রনের ঘাটতি হলে বেশি বেশি আয়রনজাতীয় খাবার খেতে দিতে হয়। আর থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য আয়রনজাতীয় খাবার কম খেতে হয় এবং প্রয়োজনে শরীর থেকে আয়রন কমানোর ওষুধ দিতে হয়, যা ব্যয়বহুল। তবে কোনো কারণে আয়রনের ঘাটতি থাকলে অবশ্যই আয়রনজাতীয় খাদ্য ও ওষুধ দিতে হবে।
প্রতিরোধে করণীয়
দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা। একজন সুস্থ মানুষ যে কাউকে (বাহক বা রোগীকে) বিয়ে করতে পারবেন। কারণ, তাঁদের সন্তানের রোগী হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে একজন বাহক আরেকজন বাহককে বিয়ে না করাই উত্তম। কারণ, এতে সন্তানের রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে যদি বিয়ে হয়েই যায় বা স্বামী–স্ত্রী দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তবে গর্ভধারণের ৮ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের জরায়ুর পানি (ক্রওনিক ভিলাস স্যাম্পল বা এমনিওসেন্টেসিস) পরীক্ষা করে বাচ্চার অবস্থা জানা যায়। গর্ভস্থ শিশু থ্যালাসেমিয়ার রোগী হলে কাউন্সেলিং করতে হবে। বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে স্বাভাবিক জন্মদানে অসুবিধা নেই।
ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক, হেমাটোলজি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল