দুই চোখের রং দুই রকম কেন হয় জানেন?

বিরল হলেও দুই চোখের আইরিশের রং ভিন্ন হতে পারে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

মানুষের দুই চোখের রং কি দুই রকম হতে পারে? বিরল হলেও দুই চোখের আইরিশের রং ভিন্ন হতে পারে। অনেকের কাছে এমন চোখ দুষ্প্রাপ্য, অদ্ভুত সুন্দর। একে বলা হয় হেটেরোক্রোমিয়া। অনেকের এক চোখেই রঙের ভিন্নতা থাকতে পারে।

হেটেরোক্রোমিয়া কী?

হেটেরোক্রোমিয়ায় এক চোখের আইরিশের রং অন্যটির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। যেমন এক চোখ নীল তো অন্য চোখ বাদামি। আবার এক চোখের আইরিশেই ভিন্ন ভিন্ন রং যেমন বাদামি ও সবুজ থাকতে পারে।

আমাদের চোখের রঙের সঙ্গে মেলানিনের সম্পর্ক রয়েছে। মেলানিন যেমন আমাদের ত্বকের রঙের জন্য দায়ী, তেমনি আইরিশের রং-ও মেলানিনের ওপর নির্ভর করে। যাঁদের চোখে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ কম থাকে, তাঁদের চোখের রং হালকা হয় আর মেলানিন বেশি থাকলে গাঢ় হয়।

হেটেরোক্রোমিয়া কত প্রকার?

১. কমপ্লিট বা সম্পূর্ণ হেটেরোক্রোমিয়া: যখন মানুষের দুই চোখের আইরিশের রং সম্পূর্ণ ভিন্ন হয় তখন তাকে কমপ্লিট হেটেরোক্রোমিয়া বা হেটেরোক্রোমিয়া ইরিডাম বলা হয়।

২. সেগমেন্টাল বা আংশিক হেটেরোক্রোমিয়া: যখন মানুষের একটি চোখের আইরিশেই দুটি ভিন্ন ভিন্ন রং দেখা যায় তখন তাকে বলে সেগমেন্টাল হেটেরোক্রোমিয়া বা হেটেরোক্রোমিয়া আইরিডিশ।

৩. কেন্দ্রীয় হেটেরোক্রোমিয়া: সেন্ট্রাল বা কেন্দ্রীয় হেটেরোক্রোমিয়া সহজে বোঝা যায় না। এ ক্ষেত্রে দুই আইরিশের রং প্রায় একই রকম, তবে পিউপিলের আশপাশের রং ভিন্ন। যেমন আইরিশ নীল কিন্তু পিউপিলের পাশে বাদামি।

আরও পড়ুন

কেন হয়?

১. জেনেটিক বা বংশগত হেটেরোক্রোমিয়া: হেটেরোক্রোমিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ বংশগত বা জেনেটিক মিউটেশন। এ ধরনের মিউটেশন চোখের জন্য বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না।

২. জন্মগত হেটারোক্রোমিয়া: জন্ম থেকেই অনেকের দুই চোখের রং দুই রকম হয়। অনেক কারণে জন্মগত হেটেরোক্রোমিয়া হয়, যেমন কনজেনিটাল হরনার সিনড্রোম, ওয়াডেনবার্গ সিনড্রোম, নিউরোফাইব্রোমেটোসিস।

৩. অন্যান্য হেটেরোক্রোমিয়া: অনেকের জন্মগতভাবে হেটেরোক্রোমিয়া থাকে না। কোনো শারীরিক অসুখের কারণে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অ্যাকুয়ার্ড হেটেরোক্রোমিয়া হয়। ফলে যে পাশে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেদিকে চোখের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন নিউরোব্লাস্টমা, অ্যাকুয়ার্ড হরনার সিনড্রোম, সেন্ট্রাল রেটিনাল ভেইন অকলুশন, গ্লুকোমা, চোখে আঘাত পাওয়া, গ্লুকোমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত আই ড্রপ, চোখের পাপড়ি বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত কিছু কসমেটিক ইত্যাদি।

চিকিৎসা কী?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হেটেরোক্রোমিয়া চোখ বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যেহেতু কিছু অসুখের কারণে এই রোগ হয়, তাই দুই চোখের রং দুই রকম হলেই চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। যেমন নিউরোব্লাস্টমা হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। চোখের ভিন্ন রঙের জন্য অস্বস্তি থাকলে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।


ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।

আরও পড়ুন