মাসিককালে স্বাস্থ্যসচেতনতা

কৈশোরে পা দেওয়ার পর একটি মেয়ের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন ঘটে, সেটি হলো মেনার্কি বা রজঃস্বলা হওয়া। এ সময় শরীরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে বলে এটি ঘটে। স্বাস্থ্যজ্ঞানের অভাবে অনেক মেয়েই এ সময় ঘাবড়ে যায়, নিজের যত্ন নিতে পারে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারে না। অনেক পরিবারে আবার নানা কুসংস্কার আর ভ্রান্ত ধারণার প্রচলন থাকে; যা আরও বিভ্রান্ত করে। ফলে নানা রোগবালাই আর অসুবিধার সম্মুখীন হতে দেখা যায় মেয়েদের।

মাসিক বা মেনস্ট্রুয়েশন একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। একে পরিবারে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা এবং এ নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করা উচিত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও টয়লেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহারের সঠিক নির্দেশনা না জানা, বিদ্যালয় ও বাইরে ভালো শৌচাগার না থাকা, যাত্রাপথে টয়লেটের ব্যবহার সীমিত থাকা ইত্যাদি কারণে বিশেষ দিনগুলোয় মেয়েরা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।

এসব কারণে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ, ইউরিন ইনফেকশন, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ বা শ্রোণিচক্রের প্রদাহ হতে পারে; যা থেকে পরে নানা জটিলতা এমনকি বন্ধ্যাত্ব, জরায়ুমুখের প্রদাহ ও ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত সৃষ্টি হতে পারে।

সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং সচেতন থাকলে এসব কষ্ট ও জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই মাসিককালীন স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে ২৮ মে পালিত হচ্ছে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন দিবস। এ বছর এ দিবসের থিম—‘টুগেদার ফর আ পিরিয়ড ফ্রেন্ডলি ওয়ার্ল্ড’।

সচেতনতা

  • সঠিক নিয়মে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার এবং ৬ ঘণ্টার বেশি তা না রাখা।

  • পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, নিয়মিত গোসল করা।

  • যৌনাঙ্গে কসমেটিক, সুগন্ধি বা অন্য কিছু ব্যবহার না করা।

  • প্রতিবার ন্যাপকিন পরিবর্তন ও নতুন ন্যাপকিন ব্যবহারের আগে হাত সাবান দিয়ে ধোয়া।

  • পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়তে

  • স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিকবান্ধব শৌচাগারের ব্যবস্থা জোরদার করা।

  • স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের শিক্ষা ও প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর তা যথাযথ ডিসপোজালের ব্যবস্থা করা।

  • স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং এ ধরনের সামগ্রীর দাম কমানো।

  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমের স্থানে ভেন্ডর মেশিন বসানো যেতে পারে; যাতে কেউ প্রয়োজনে তা কিনতে পারেন।

  • কুসংস্কার দূর করা।

  • ডা. ফারজানা শারমিন, সহযোগী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, বিএসএমএমইউ