বাজারি আয়ুর্বেদিক বা ভেষজ উপাদান খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
ভারতীয় উপমহাদেশে আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ চিকিৎসা বহুযুগ ধরে প্রচলিত। আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিতও বটে। তবে রাস্তাঘাটে যেসব আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ বিক্রি হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসব অনুমোদিত নয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ও উপকারী। অথচ অনুমোদনহীন এসব ওষুধ কিংবা উপাদানে কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে, যার অনেকটাই আমাদের অজানা। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবনের ফলে ক্ষতি হতে পারে, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।
অনুমোদনহীন বা বাজারি আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ যে কারণে ক্ষতিকর
এসব ওষুধ ও উপকরণে থাকতে পারে সিসা,পারদ ও আর্সেনিকের মতো উপাদান
অনুমোদনহীন আয়ুর্বেদিক বা ভেষজ ওষুধ সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। এতে থাকা অনেক ক্ষতিকর উপাদান সম্পর্কেই আমরা জানি না।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সাময়িক পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া বা অ্যালার্জির সমস্যা।
মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
লিভারের এনজাইমগুলোর ভারসাম্যহীনতা নষ্ট হয়ে যায়
কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, ফলে হাত, পা, মুখসহ পুরো শরীর ফুলে যায়
ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়
দ্রুত ওজন বাড়ায়
স্নায়ুর ক্ষতি হয়
শিশুদের শারীরিক বিকাশ বিলম্বিত হয়
যাদের সেবনের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
শিশু
অন্তঃসত্ত্বা
স্তন্যদানকারী মা
বয়সী ব্যক্তি
উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে যাঁদের
দীর্ঘদিন লিভার, হার্ট ও কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছেন যাঁরা
সচেতনতা
যেকোনো ওষুধ বা ভেষজ উপাদান সেবন করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যাঁরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
অনেকে অ্যালোপ্যাথি আর ভেষজ একসঙ্গে চলবে না ভেবে ভেষজ খাওয়ার সময় নিজের ডায়াবেটিস, প্রেশারের বা অন্যান্য ওষুধ বন্ধ করে দেন। এটি ভীষণ বিপজ্জনক।
শহরের তুলনায় গ্রামে অনুমোদনহীন বা বাজারি আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ ওষুধ গ্রহণের প্রবণতা বেশি। অজ্ঞতার কারণে এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ব্যতীত দীর্ঘদিন এসব ওষুধ সেবনের ফলে শরীরে ধীরে ধীরে সিসা, আর্সেনিক ও পারদের মতো ক্ষতিকর পদার্থ জমে লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হয়, যা একজন মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ডা. শিমু আক্তার: সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকস বিভাগ, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাজিতপুর
খেয়াল করুন: লেখাটি ১৭ মে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আয়ুর্বেদিক ওষুধ বা ভেষজ উপাদান খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?’ শিরোনামে। তবে লেখাটিতে কিছু অসম্পূর্ণতা ধরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান। তাই লেখাটির শিরোনাম পরিবর্তন এবং কিছু অংশ সম্পাদনা করা হলো।—বি.স.