কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার শিশুর বিলম্বিত বিকাশ হচ্ছে
মানবশিশু জীবনের বিভিন্ন ধাপ পার করে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হয়ে ওঠে। শিশুর বিকাশের ধাপগুলো একটার পর একটা সামনে আসে। কোনো ধাপ পার না করে শিশু অন্য ধাপে যেতে পারে না। মায়ের জরায়ুতে ভ্রূণ তৈরির মুহূর্ত থেকে শুরু হয় এই বিকাশ। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বিকাশের ধাপগুলো শরীরের ওপরের দিক থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে নিচের দিকে পরিপূর্ণতা পায়; মানে আগে ঘাড় শক্ত হয়, এরপর শেখে বসা ও হামাগুড়ি দেওয়া; সব শেষে শেখে দাঁড়ানো আর হাঁটা। ভাষা শেখা, বুদ্ধির বিকাশও এ রকম ধাপে ধাপে হয়ে থাকে। বিকাশের বিভিন্ন মাইলফলক অর্জনের গতি বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে ভিন্ন হলেও কোনো ধাপ বাদ দিয়ে শিশু অন্য ধাপে যেতে পারে না। বরং দেরি হতে পারে। একই পরিবারের দুটি শিশুও বিভিন্ন হারে তাদের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারে। বংশগতির ধারা, পরিবেশ ইত্যাদি শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫ বছরের নিচের কোনো শিশু যখন তার বয়সের সমানুপাতে শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক ও কথা বলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে না, তখন আমরা তাকে বিলম্বিত বিকাশ বা ডেভেলপমেন্টাল ডিলে বলি। বিকাশের দুই বা ততোধিক ক্ষেত্রে যদি এই বিলম্ব দেখা যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টাল ডিলে।
জন্মের আগে, জন্মের সময় কিংবা জন্মের পর বিভিন্ন সমস্যার জন্য হতে পারে শিশুর বিলম্বিত বিকাশ। এই সব কারণের মধ্যে রয়েছে—
জেনেটিক অথবা বংশগত রোগ যেমন ডাউন সিনড্রোম।
হরমোনাল সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম।
বিপাকীয় সমস্যা থেকে সৃষ্ট স্নায়ুর রোগ।
মস্তিষ্কের গঠনগত বিভিন্ন সমস্যা।
জন্মগ্রহণের পর শিশু না কাঁদলে বা মস্তিষ্কে আঘাত পেলে।
শিশু স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে অথবা সময়ের আগে জন্মালে।
জন্মের আগে বা পরে কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হলে।
শিশুর খিঁচুনি বা জন্ডিস হলে, মাথায় আঘাত পেলে, মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট বা বড় হলে।
মস্তিষ্ক কোনো বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে এলে।
জন্মের আগে যদি মায়ের কোনো সমস্যা থাকে কিংবা প্রসবের সময় মায়ের যদি কোনো জটিলতা হয়ে থাকে।
বেশির ভাগ শিশু ৩ মাস বয়সে মাথা তুলতে শুরু করে, ৬ মাসে বসা শুরু করে এবং ১৮ মাসে হাঁটতে শুরু করে। আবার ভাষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশু ৬ মাসের দিকে অর্থহীন শব্দ (বাবলিং) বলতে শুরু করে, ৮ থেকে ১২ মাসের দিকে ছোট ছোট অর্থবোধক শব্দ বলতে শুরু করে, ২ বছরের দিকে দুইটি শব্দ জোড়া দিয়ে কথা বলতে শেখে। এগুলো সময়মতো না হলে বিলম্বিত বিকাশ হচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হয়।
এ ছাড়া মায়ের দিকে চোখে চোখ রেখে না তাকানো, চোখের সামনে খেলনা দিলে তা ধরতে না পারা, ডাকলে সাড়া না দেওয়া, জামাকাপড় পরতে না শেখা, নিজে নিজে খেতে না পারা ইত্যাদিও বিলম্বিত বিকাশের লক্ষণ।
শিশুর বিকাশে বিলম্ব দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত তার কারণ নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসক বিশেষত শিশু–নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। সঠিকভাবে কারণ নির্ণয় করা গেলে প্রয়োজনীয় ওষুধ, ডেভেলপমেন্টাল থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি প্রভৃতির মাধ্যমে শিশু বিকাশের বিভিন্ন ধাপে পৌঁছাতে পারে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর