২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রোজ রোজ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কি ঠিক

‘আমার তো রোজই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হয়! না খেলেই পেটে গ্যাস জমে।’—এমন দাবি অনেক রোগীই করেন। অনেকে আবার বলেন, ‘আমাকে তো অন্য ওষুধ খেতে হয়, তাই সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধও খাই।’ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের মতো অনেকে এভাবে ওমিপ্রাজল বা এই গোত্রের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে খেয়ে যাচ্ছেন। এই অভ্যাস কি ভালো? দীর্ঘ মেয়াদে এসব ওষুধ সেবনে কি কোনো সমস্যা হতে পারে?

সাধারণত মানুষ পেটের যেকোনো সমস্যাকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে ধরে নেন। তাঁদের মধ্যে আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে অথবা ওষুধের দোকানের কর্মীদের কথামতো নানা জাতের অ্যাসিড নিরোধক ওষুধ দিনের পর দিন খেয়েই যাচ্ছেন। পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির উপসর্গের জন্য এসব ওষুধ দিনের পর দিন খাওয়ার কি আদৌ প্রয়োজন আছে? এসব ওষুধ কতটা নিরাপদ? উত্তর হলো—প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর গোত্রের এসব ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার দরকার নেই এবং সেটা বিপজ্জনকও বটে! নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা হলেই কেবল চিকিৎসক এসব ওষুধ স্বল্পমেয়াদে দিয়ে থাকেন। এমনকি পেপটিক আলসারেও এসব ওষুধ দুই থেকে তিন মাস খেলেই রোগ ভালো হয়ে যায়।

সাধারণত মানুষ পেটের যেকোনো সমস্যাকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে ধরে নেন
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন এসব ওষুধ খেলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে—

১. পাকস্থলীর অ্যাসিড মানব শরীরের প্রয়োজনেই তৈরি হয়। বেশ কিছু খাবারের হজমপ্রক্রিয়ার জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিনের পর দিন এবং বেশি মাত্রায় অ্যাসিডরোধী এসব ওষুধ খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২. পাকস্থলীর অ্যাসিড আমাদের খাবারের সঙ্গে থাকা জীবাণু অনেকাংশেই ধ্বংস করে। তাই এসব ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ একেবারে কমে যায়। ফলে বারবার পরিপাকতন্ত্রে কিছু সংক্রমণ হতে পারে, যেমন: টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি। কমে যেতে পারে পরিপাকতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।

৩. আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি হতে কাঁচামাল হিসেবে যে আয়রনের প্রয়োজন হয়, সেই আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসিড নিরোধক ওষুধ খেলে ব্যাহত হয় আয়রন শোষণ, পরিণতিতে দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতা।

৪. গবেষণা বলে, দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ৪৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের হতে পারে অস্টিওপোরোসিস।

৫. দিনের পর দিন অধিক ডোজে এসব ওষুধ খেতে থাকলে পাকস্থলীর পিএইচ ও পরিবেশ স্থায়ীভাবে পাল্টে যেতে থাকে। ক্রমাগত ক্ষতি হতে পারে কোষগুলোর। কোষের এই পরিবর্তন, এমনকি পাকস্থলীর ক্যানসারও সৃষ্টি করতে পারে।

মনে রাখবেন, যেকোনো ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। আছে নির্দিষ্ট ডোজ ও মেয়াদে সেবন করার রীতি। আরেকটি বিষয় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো, পেটের যেকোনো সমস্যাই কিন্তু গ্যাস্ট্রিক নয়। অনেক সময় পিত্তথলির সমস্যা, জিইআরডি, পাকস্থলীর ক্যানসারের মতো জটিল কোনো রোগের উপসর্গকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে মনে হয়। পাকস্থলীতে এইচপাইলোরি সংক্রমণ হলে গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ হয়। কিন্তু প্রতিটি রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা আছে। আর পেট ফাঁপা, ঢেকুর ওঠা, গলা জ্বলার মতো উপসর্গগুলো জীবনাচরণের কিছু স্বাস্থ্যকর নিয়মকানুন মেনেই দূর করা সম্ভব। এ জন্যই দিনের পর দিন ওষুধ খেয়ে জটিলতা বাড়াবেন না।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা