অণ্ডকোষ থেকে ওপরের দিকে বিস্তৃত শিরাগুলোর অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া ও প্যাঁচানো অবস্থার নামই ভেরিকোসিল। সাধারণত শৈশব ও কৈশোর বয়সে এ রোগ দেখা যায় বেশি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে—বন্ধ্যাত্ব এর অন্যতম। বাঁ দিকে এ রোগটা বেশি দেখা গেলেও ডানে বা উভয় পাশেও হতে পারে।
কারণ
ভেরিকোসিল বিভিন্ন কারণে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারণ অজানাই রয়ে যায়। জ্ঞাত কারণগুলোর মধ্যে পেটের দুই বড় ধমনির মধ্যে অণ্ডকোষের শিরা চাপা পড়া বা বাঁ কিডনির শিরার চাপ সরাসরি অণ্ডকোষের শিরায় পড়া এবং জন্মগতভাবে শিরার একমুখী কপাটিকার অনুপস্থিতি বা দুর্বলতাসহ কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের নানাবিধ টিউমার অন্যতম।
সাধারণত শৈশব ও কৈশোর বয়সে এ রোগ দেখা যায় বেশি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। রোগে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে—বন্ধ্যাত্ব এর অন্যতম।
লক্ষণ
সাধারণত লম্বা, পাতলা গড়নের পুরুষেরা এ রোগের উপসর্গ নিয়ে আসেন। নির্দিষ্ট অণ্ডকোষে ব্যথা থাকে, যা ওপরের দিকে ছড়িয়ে যায়। অণ্ডকোষের শিরাগুলো ফোলা ও প্যাঁচানো থাকতে পারে, যা দেখেই বোঝা যায় বা হাতের ছোঁয়ায় পাতলা ব্যাগভর্তি কৃমি বা কেঁচোর মতো অনুভূত হয়। পাশাপাশি পেটের কোনো টিউমার নিয়েও রোগীদের কেউ কেউ আসেন।
রোগনির্ণয়
বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টরা ক্ষেত্রবিশেষে রোগীকে দাঁড়িয়ে ও শোয়া অবস্থায় পরীক্ষা করে রোগটা নির্ণয় করতে পারেন। তবে কালার ডপলার আলট্রাসাউন্ড করলে সামগ্রিক চিত্রটা ভালোভাবে বোঝা যায়। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের আগে অবশ্যই এটা করে নিতে হবে।
রোগের ব্যাপ্তি অনুযায়ী এ রোগ চার ধরনের হয়। গ্রেড শূন্য থেকে গ্রেড ৩। ভেরিকোসিল পরবর্তী অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যেতে পারে, অণ্ডকোষের ভেতরের প্রকৃতি পাল্টে যেতে পারে; যার ফলে শুক্রাণুর গুণগত মানের অবনতি ঘটে। এতে শেষমেশ বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে।
চিকিৎসা
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ব্যথা উপশমকারী ওষুধের সঙ্গে আরও কিছু ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। তবে যে ক্ষেত্রে শিরাগুলো বেশি ফুলে যায় বা প্যাঁচানো থাকে, সার্বক্ষণিক কষ্টদায়ক ব্যথা থাকে, যা ওষুধে কমে না, বন্ধ্যাত্ব বা কিছু ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসেবে এ রোগের শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা গেলেও অপারেটিং অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে শল্যচিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। ভেরিকোসিল সন্দেহ করলে দ্রুতই বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হলে ভালো।
অধ্যাপক ডা. নিতাই পদ বিশ্বাস, ইউরোলজিস্ট ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি বিভাগ, আলোক হেলথ
কেয়ার লি.