গরমে মাথার ত্বক ঘেমে ও ধুলাবালু জমে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয়। এর ফলে স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ব্যথা, জ্বলুনি হতে পারে। সাধারণত তিন থেকে চার ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণে এমনটা হতে দেখা যায়।
মেলাসিজিয়া ছত্রাক আমাদের মাথার ত্বকের গোড়ায় বাস করে। মাথার ত্বকে সিবাম নামক একধরনের তেল নিঃসৃত হয়, যা চুলকে মসৃণ ও সুন্দর রাখে। মেলাসিজিয়া এই সিবাম তেল খেয়ে বেঁচে থাকে। এটি সিবাম তেলের ওপর যে এনজাইম প্রয়োগ করে, তা তেলকে ভেঙে ফেলে মেলাসিজিয়ার খাওয়ার উপযোগী করে।
তেলের যে অংশ মেলাসিজিয়া খায় না, তা জমাট বেঁধে মাথার ত্বক ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যেতে চায়। ফলে চুলকানি ও জ্বলুনি হয়। মাথার ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের নিচে নতুন ত্বক তৈরি হয় ও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক খসে যায়। একেই খুশকি বলে।
যেসব ব্যক্তির মাথার ত্বকে তেলের নিঃসরণ বেশি, তাঁদের খুশকি বেশি হয়। খুশকি মাথার ত্বক ছাড়া মুখ, নাক, কান ইত্যাদি জায়গায়ও দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় মাথার ত্বকে বিবর্ণ ময়লার মতো জমা, মৃত ত্বক উঠে আসা, ত্বক থেকে আঁশের মত ওঠা, কপাল ও ঘাড়ে সাদাটে আবরণ পড়া, ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়া, চুলকানি, ত্বক ফাটা এবং রক্ত বের হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
মাথার ত্বকে ঠিক কোন ধরণের সংক্রমণ হয়েছে, তা নিশ্চিত না হয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। এতে মাথার ত্বকের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে। নিয়মিত গোসল করা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। অনেক সময় সাধারণ সাবান বা শ্যাম্পুসহ নিয়মিত গোসলেই এটি সেরে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ও শ্যাম্পু ব্যবহারের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চিকিৎসায় কাজ না হলে বা অস্বস্তি বাড়লে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ফাঙ্গাস সংক্রমণ হলে সাধারণত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষার পর মুখে সেবনের ঔষধ ও ফটোথেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঘরোয়া উপকরণ দিয়েও মাথার ত্বকের সংক্রমণ কমানো যায়। যেমন অ্যালোভেরা, বেকিং সোডা, নারকেল তেল, জলপাই তেল ও ভিনেগার ব্যবহারে সংক্রমণ কমে।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল