পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের কয়েকটি উপায়
মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর দৈনন্দিন সব কাজের কারণে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণকে বলে কার্বন ফুটপ্রিন্ট। পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের মূল লক্ষ্য হলো নিজের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো। চলুন, আজ জেনে রাখা যাক পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের কিছু উপায়...
১. শক্তি সঞ্চয়ের মানসিকতা রাখুন
শক্তি সঞ্চয় করা শুনতে যতটা কঠিন মনে হয়, করে দেখানো ততটা কঠিন নয়। দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম মেনে চললেই সম্ভব। যেমন:
ক. ফ্যান, বাল্বসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অযথা চালু করে রাখবেন না।
খ. এনার্জি সেভিং এলইডি লাইট, সোলার প্যানেল ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
গ. শীতকালে হিটার এবং গরমে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়ানো বা কমানো থেকে বিরত থাকুন।
ঘ. এসি বা হিটার ব্যবহারের সময় জানালা বন্ধ রাখুন।
২. শক্তির ব্যবহার কমান, পুনরায় ব্যবহার করুন, রিসাইকেল করুন
ক. প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ানটাইম প্লেট, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ইত্যাদির ব্যবহার কমান।
খ. পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ, বোতল ইত্যাদি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
গ. প্লাস্টিক ব্যাগ ফেলে দেওয়ার আগে কয়েকবার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
ঘ. সমুদ্রসৈকত, উদ্যান ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিন।
ঙ. টেকসই পণ্য ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
চ. রিসাইকেল করার যোগ্য উপাদানে তৈরি পোশাক এবং অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
ছ. ই-বর্জ্য যেমন ব্যাটারি, ভাঙাচোরা ও পুরোনো বৈদ্যুত্যিক যন্ত্রাংশ রিসাইকেল করুন।
৩. গাড়ির ব্যবহার কমান
গাড়ির কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করে। গাড়ি থেকে নির্গত হয় গ্রিনহাউস ইফেক্ট সৃষ্টিকারী বেশ কয়েকটি গ্যাস। তাই ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে হাঁটা, গণপরিবহন ব্যবহার, সাইকেল চালানো ইত্যাদি কাজ করে আপনিও আপনার শহরের বাতাসের মান বাড়াতে অবদান রাখতে পারেন।
৪. ভোক্তা হিসেবে সচেতন থাকুন
কেনাকাটা করার সময় টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরিতে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য কেনার চেষ্টা করুন।
৫. খাদ্যের অপচয় রোধ করুন
খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ফেলে না দিয়ে কাউকে দান করে দিন, পশুপাখিকে খাওয়ান, চুল বা ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
৬. পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন
গোসল, কাপড় কাচা, দাঁত ব্রাশ, থালাবাসন ধোয়ার সময় শুধু শুধু পানির কল চালু করে রাখবেন না। বাসার কোনো পানির পাইপে ছিদ্র থাকলে দ্রুত মেরামত করুন। নষ্ট কোনো কল থেকে অনবরত পানি পড়লে সেটি বদলে ফেলুন।
৭. পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করুন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কিছু বহুল ব্যবহৃত উপাদান আছে, যেসব পরিবেশ এবং আপনার শরীরের ক্ষতি করে। যেমন ব্লিচ, অ্যারোসল, ওভেন ক্লিনার, এয়ারফ্রেশনার ইত্যাদি। এসবের বদলে পরিষ্কারক হিসেবে ঘরোয়া কিছু উপাদান, যেমন ভিনেগার, বেকিং সোডা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনো পণ্য কেনার আগে দেখুন সেটাতে কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা কীটনাশক আছে কি না; থাকলে পণ্যটি কিনবেন না। যেসব পণ্য তৈরিতে কোনো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছ, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর চর্বি, হাড় ইত্যাদি প্রয়োজন হয়, সেসব ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৮. স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করুন
স্থানীয় ও অর্গানিকভাবে উৎপাদিত খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য কেনার চেষ্টা করুন৷ আপনার এলাকায় বসবাসরত কোনো ব্যক্তি যদি কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকেন, তাঁর কাছ থেকে সরাসরি শাকসবজি, ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য কেনার চেষ্টা করুন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করলে পণ্য পরিবহনে কম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে, গ্রাহক রাসায়নিকমুক্ত খাবার খেতে পারবেন, উৎপাদনকারী অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি লাভবান হবেন।
৯. নিজেই নিজের খাদ্য উৎপাদনের চেষ্টা করুন
নিজস্ব ফল ও সবজির বাগান আপনার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাবে। অন্যের উৎপাদিত খাদ্য আপনার কাছে এসে পৌঁছাতে যানবাহন থেকে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, আপনি নিজেই নিজের বাগান থেকে সংগ্রহ করে খাবারগুলো খেলে তা হবে না।
১০. অতিরিক্ত মাংস এবং দুগ্ধজাত খাদ্য খাবেন না
বনভূমি উজাড় ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের অন্যতম উৎস হচ্ছে গবাদিপশুর খামার। শরীর ভালো রাখতে মাংস ও দুগ্ধজাত খাদ্যের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। অতিরিক্ত মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আপনি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। শাকসবজি ও অর্গানিক খাবার খাওয়ার প্রতি আরও জোর দিন।
১১. গাছ লাগান
গাছ বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়, পরিবেশ শীতল করে। নিজের সাধ্যমতো গাছ লাগিয়ে আপনি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
১২. নিজে জানুন, অন্যকে জানান
পরিবেশবিষয়ক তথ্য জানার চেষ্টা করুন। পরিবেশ দিবসের সভা-সেমিনার এবং অন্যান্য আয়োজনে অংশ নিন। বই পড়ুন, প্রামাণ্যচিত্র দেখুন। নিজে জানুন, প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বন্ধুবান্ধব ও কাছের মানুষদের সঙ্গে ভাগাভাগি করুন।