যে পাঁচটি কারণে রাতের খাবার আগে আগে খাবেন
চিকিৎসকেরা সব সময় ডিনার বা নৈশভোজ একটু আগেভাগেই সেরে ফেলতে বলেন। কিন্তু ঠিক কেন, কী উপকার মেলে এতে, তা অনেকেই জানেন না। এশীয়রা, বিশেষ করে বাংলাদেশিরা একটু দেরি করে নৈশভোজ খেতে অভ্যস্ত। কারণ, আমরা সন্ধ্যায় চায়ের সঙ্গে হালকা নাশতা খেয়ে থাকি। অন্যদিকে পশ্চিমারা সাধারণত সন্ধ্যাতেই নৈশভোজ সেরে নেয়। কোনটা ভালো? অবশ্যই আগেভাগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলাটা স্বাস্থ্যকর। অন্তত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে খাবার সারা উচিত। তার পেছনে অন্তত পাঁচটা কারণ দেখানো যায়।
১. দেহ-ছন্দ
আদিকাল থেকে আমাদের শরীর রাতে ঘুম আর দিনে কাজ করার জন্য অভ্যস্ত। সে কারণে বিপাকক্রিয়া দিনের শেষভাগে এসে ধীর হয়ে যেতে থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক, অন্ত্র, যকৃৎ—সব অঙ্গ সন্ধ্যার পর থেকে তৈরি হতে থাকে বিশ্রামের জন্য। এই ছন্দকে বলা হয় সারকাডিয়ান রিদম বা দেহ-ছন্দ। আমরা যত দেরি করে খাওয়াদাওয়া করব, তত এদের বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটবে। বিজ্ঞানীরা বলেন, সারা রাত ধরে পরিপাকতন্ত্র, যকৃৎ বা লিভার বিশ্রামের জন্য নিজেদের ডিটক্স করে, মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলো রেস্টিং স্টেট বা বিশ্রামের পর্যায়ে চলে যায়, অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো এ সময় কাজ করতে শুরু করে। বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থেকে এবং খাবারদাবার খেয়ে আমরা কেবল এদের স্বাভাবিক ছন্দকে বিরক্ত করি, যা মোটেও কাম্য নয়।
২. হজমে ব্যাঘাত
খাবার গ্রহণের পরপর শুয়ে বা ঘুমিয়ে পড়লে অ্যাসিডিটি, বদহজম, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা বাড়ে। কারণ, খাবার ততক্ষণে পাকস্থলী বেয়ে নিচে নামার সুযোগই পায় না, শোষিত হওয়া তো দূরের কথা। উচিত হলো শোয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে যেন শোষণ ও বিপাকক্রিয়া মোটামুটিভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়, তারপর ঘুমাতে যাওয়া। আরও ভালো খাওয়ার পর এবং ঘুমানোর আগে অন্তত ২০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি বা পায়চারি করা। এতে হজম ভালো হয়, গ্যাসের সমস্যা কমে, পরবর্তী দিন কোষ্ঠ পরিষ্কারে সমস্যা হয় না।
৩. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যত দেরি করে রাতের খাবার গ্রহণ করবেন, তত সকালে খালি পেটে আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি আসার ঝুঁকি বাড়বে। এটি শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতার সঙ্গে জড়িত। দেরি করে রাতের খাবার খেলে তার প্রতিক্রিয়ায় অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করার সময় মেলে না। ফলে ওই খাবারের শর্করা পুরোপুরি বিপাক হতে পারে না। ফলে পরদিন সকালে ফাস্টিং সুগার বা খালি পেটের শর্করা বেড়ে যেতে পারে।
৪. নিশ্ছিদ্র নিদ্রা
রাতে দেরি করে খাবার গ্রহণের সঙ্গে রাতের ঘুমের ব্যাঘাতের সম্পর্ক বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। বলা হয়, যে যত দেরি করে খাবেন, তত রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে। অস্বস্তি হবে, ভালো ঘুম হবে না। আপনি যদি আগেভাগে খেয়ে ফেলেন, তবে শরীর রেস্টিং স্টেট বা বিশ্রামের পর্যায়ে বিশ্রামের পর্যায়ে যেতে সক্ষম হয়।
৫. হরমোনের ভারসাম্য
আগেই বলা হয়েছে শরীরটা রাতে বিশ্রাম ও দিনে কাজ করার জন্য তৈরি। সে কারণে বেশির ভাগ হরমোন, যেমন কর্টিসল, ইনসুলিন, থাইরক্সিন ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে তৈরি হয় সকালে। অন্যদিকে দিনের শেষভাগে এসে হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে। মধ্যরাতে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। রাত জাগা এবং রাত জেগে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই হরমোন নিঃসরণের ছন্দ বা চক্রকে ব্যাঘাত করে ফেলি। ফলে নানা রকম বিপাকজনিত ও হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। বাড়তে পারে ওজন, রক্তে শর্করা ও চর্বি, হৃদ্রোগের ঝুঁকি। তাই রাত করে খাদ্য গ্রহণ মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।