থাইরয়েড কী ও করণীয়

গলার সামনের দিকে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরে থাইরয়েড হরমোনের প্রধান উৎস। এই হরমোন শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে; বিপাকের হার, হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা, হজমের প্রক্রিয়া, পেশি ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।

ধরন

কয়েক ধরনের থাইরয়েড সমস্যা দেখা যায়। যেমন থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বা হাইপোথাইরয়ডিজম, হরমোন বেশি নিঃসরণ হওয়া বা হাইপারথাইরয়েডিজম। এ দুটি প্রধান সমস্যা ছাড়াও থাইরয়েড ফোলা, থাইরয়েড টিউমার ও থাইরয়েড ক্যানসারের মতো সমস্যাও হতে পারে।

কারণ

নানা কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। এ হরমোন উৎপাদনে আয়োডিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আয়োডিন কম থাকলে থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হবে অথবা থাইরয়েড ফুলে যাবে। এই ফুলে যাওয়াকেই বলা হয় গলগণ্ড। আবার জন্মগতভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির ত্রুটিতেও থাইরয়েডে সমস্যা দেখা দেয়। কারও থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তার সন্তানদেরও এ সমস্যা হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ত্রুটি এবং অ্যান্টিবডি তৈরির কারণে থাইরয়েডে সমস্যা দেখা দেয়।

লক্ষণ

প্রজননক্ষম নারীদের হাইপোথাইরয়েডিজমের হার পুরুষদের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি, জটিলতাও বেশি। অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, সব সময় ক্লান্তিবোধ, অনিয়মিত মাসিক বা দীর্ঘদিন অতিরিক্ত মাসিকের মতো সমস্যা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া, চুল ও ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বারবার গর্ভপাত, বন্ধ্যত্বসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। শিশুদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত, বয়ঃসন্ধি বিলম্ব ও মানসিক বিকাশে সমস্যাও দেখা দেয়। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডে হঠাৎ করেই ওজন কমা, কাঁপুনি, উদ্বেগ, অত্যধিক ঘাম ও ঋতুচক্রে কম রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েডে সমস্যার কারণে মাংসপেশির ক্ষয় বেড়ে যায়, সক্ষমতা কমে যায়। চোখ বড় হয়ে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়

উপসর্গ ছাড়াই চিকিৎসকেরা রক্তে ফ্রি থাইরক্সিন এবং টিএসএইচ (থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন) পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। প্রয়োজনে থাইরয়েডের নানা অ্যান্টিবডি, গলার আলট্রাসনোগ্রাফি, রেডিও-আয়োডিন আপটেক পরীক্ষাও করতে হতে পারে। ক্যানসার সন্দেহ করলে সুই দিয়ে গলা থেকে টিস্যু নিয়ে বা বায়োপসি করার দরকার হতে পারে। নারীদের সন্তান নেওয়ার আগে ও গর্ভাবস্থায় উপসর্গ না থাকলেও থাইরয়েড পরীক্ষা করা নিরাপদ।

চিকিৎসা

হাইপোথাইরয়েডিজমের ওষুধ সাধারণত আজীবন খেতে হয়। বারবার পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করা প্রয়োজন। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে থাইরয়েডে অস্ত্রোপচার দরকার হয়। থাইরয়েড সন্দেহ হলে অবশ্যই একজন হরমোনবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

  • ডা. মারুফা মোস্তারী, সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়