শিশুদের অ্যাবসেন্স সিজার কী? কেন হয়?
শিশুদের মধ্যে স্নায়ুজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে এপিলেপসি বা মৃগীরোগ অন্যতম। এপিলেপসিরও রয়েছে নানা রকমফের। অ্যাবসেন্স সিজার এ রকমই একধরনের মৃগীরোগ। শিশুদের মৃগীরোগের মধ্যে ১০ থেকে ১৭ শতাংশ হলো অ্যাবসেন্স সিজার। এ ধরনের খিঁচুনিকে ‘পিকনোলেপসি’ বা ‘পেটিট মাল সিজার’ও বলা হয়ে থাকে। এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক ফ্যাক্টর জড়িত থাকতে পারে।
সাধারণত চার থেকে আট বছর বয়সী শিশুদের মাঝে এই খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। মেয়েশিশুদের এটা বেশি হয়ে থাকে। প্রতিদিন অনেকবার এই খিঁচুনি হতে পারে। শিশু খুব অল্প সময়ের (৩-২০ সেকেন্ডের) জন্য হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে যায়, কী বলা হচ্ছে বুঝতে পারে না, হাতে কলম বা কোনো জিনিস থাকলে পড়ে যেতে পারে। চোখ দেখে মনে হতে পারে সে কিছু সময়ের জন্য ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। এ রকম ঘটনা ক্ষণে ক্ষণে অনেকবার হতে থাকে।
বেশির ভাগ মৃগীরোগ বা এপিলেপসিতে রোগীর হাত, পা, শরীর শক্ত হয়ে হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে। রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, জিহ্বায় কামড় পড়ে, হয়তো প্রস্রাব বা পায়খানা হয়ে যেতে পারে। এরপর রোগী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কিছু বিচ্ছিন্ন খিঁচুনি বাদে পুরো ব্যাপারটা সাধারণত কয়েক মিনিটের জন্য হয়ে থাকে।
কিন্তু অ্যাবসেন্স সিজার ঠিক এভাবে হয় না। তাই অভিভাবকেরা প্রথমে একে খিঁচুনি বলে ভাবতেও পারেন না, বরং স্কুলে বা বাসায় এসব শিশুকে অনেক সময় অমনোযোগী হিসেবে ভাবা হয়। কারণ তার স্কুলের পড়ালেখাও আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে। অনবরত খিঁচুনি হওয়ায় প্রায়ই সে শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন তা ভালোমতো বুঝতে বা শুনতে পারে না।
এ ধরনের মৃগীরোগে বাচ্চাদের মস্তিষ্কের দুই দিকেই আক্রান্ত হয়। ইলেকট্রোএনকেফালোগ্রাম বা ইইজি পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই এ রোগ শনাক্ত করা যায়।
ইথোসাক্সামাইড, সোডিয়াম ভালপ্রোয়েটজাতীয় ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি সেবনে এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে অবশ্যই সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।