যে কারণে এই গরমে প্রস্রাব আটকে রাখবেন না
তীব্র গরমে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়। আর ডিহাইড্রেটেড অবস্থায় অনেকের প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে দেখা দেয়। প্রস্রাবের সময় শরীরের বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে মূত্রনালির ব্যাকটেরিয়াগুলোও বের হয়ে যাওয়া বা ওয়াশ হওয়ার কথা। গরমে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় বলে মূত্রনালির জীবাণুগুলো পুরোপুরি বের হতে পারে না এবং ওই স্থানে থেকে গিয়ে সংক্রমণ করে। আবার গরমে আমরা প্রচুর ঘামি এবং শরীরের কিছু স্থান, যেমন ঊরুর ভাঁজ, প্রস্রাবের আশপাশের জায়গা সব সময় আর্দ্র থাকে। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের জন্য এই পরিবেশ আদর্শ। তাই তীব্র দাবদাহে যাতে প্রস্রাবে সংক্রমণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রস্রাবে জ্বালা মানেই সংক্রমণ নয়
তীব্র গরমে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। গাঢ় রঙের হতে পারে। এমনকি প্রস্রাব করার সময় জ্বালা করতে পারে। কিন্তু প্রস্রাবে জ্বালা হওয়া মানেই সংক্রমণ না-ও হতে পারে। কারণ পানিশূন্যতা হলে প্রস্রাব গাঢ় ও কনসেনট্রেটেড হয়ে পড়ে। এই গাঢ় প্রস্রাব মূত্রথলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যাকে বলে সিস্টাইটিস। ফলে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালা হতে পারে।
সংক্রমণ কী করে বুঝবেন
যদি জ্বালা বা অস্বস্তির সঙ্গে জ্বর বা কাঁপুনি থাকে, তবে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। আবার শুধু পানিশূন্যতার জন্য জ্বালা হলে প্রচুর পানি পান করার পর তা ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা দূর না হলে বুঝতে হবে সংক্রমণ হয়েছে।
কোনো কোনো রোগী, বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের কোনো বড় উপসর্গ বা জ্বর ছাড়াই প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। নারীদের, বিশেষ করে মেনোপজ-পরবর্তী বয়সের নারীদেরও প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তাই তাঁরাও উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করবেন।
প্রস্রাবের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক টেস্ট ও কালচার টেস্ট করে সংক্রমণের ব্যাপকতা ও ধরন বোঝা যায়। জ্বালা হলেই না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে ফেলবেন না। রুটিন টেস্টে পাস সেল বেশি থাকলে ও উপসর্গ বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে পারেন, যা কালচার রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত করা হয়। আর সম্ভব হলে কালচার রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো। তাহলে সঠিক ও কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক বাছাই করা সহজ হয়।
গরমে কীভাবে ঝুঁকি এড়াবেন
তীব্র গরমে সব সময় নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন। পানিশূন্যতা দূর করতে সবচেয়ে কার্যকর পানীয় হচ্ছে পানি, আর কিছু নয়। তাই প্রচুর পানি পান করুন। অন্তত দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা রং হলুদ হলে বুঝবেন পানি কম খাওয়া হচ্ছে। তাহলে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। চা-কফি যত কম খাওয়া যায়, তত ভালো। কারণ এসব শরীরকে পানিশূন্য করে। পানির বিকল্প হিসেবে কোমল পানীয় বা চিনিযুক্ত জুস খাবেন না। এসবও শরীরকে আরও পানিশূন্য করে। ডাবের পানি, তাজা ফলের রস খেতে পারেন মাঝেমধ্যে। ক্র্যানবেরি জুস ভালো।
বারবার প্রস্রাব করে প্রস্রাবের থলি খালি করবেন। তাতে জীবাণু জমতে পারবে না। প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। প্রস্রাব লাগলেই টয়লেটে যাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। গরমে পানিশূন্যতার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর তাজা শাকসবজি, ফলমূল খান। ইসবগুল, চিয়া সিড খেতে পারেন।
প্রস্রাবের পথ ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখবেন। পাতলা সুতি অন্তর্বাস পরবেন এবং ঘেমে ভিজে গেলে পরিবর্তন করবেন। পরিষ্কার করবেন সঠিকভাবে। শৌচকার্যের নিয়ম হলো সামনে থেকে পেছন দিকে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর টয়লেট পেপার দিয়ে শুকনা করে নিতে হবে।
মাসিকের সময় একটি স্যানিটারি প্যাড ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করবেন না। ব্যক্তিগত হাইজিন মেনে চলুন।