চোখেও কি স্ট্রোক হতে পারে

স্ট্রোক কথাটি শুনলেই প্রথমে মস্তিষ্কের কথা মনে হয়। আবার হিটস্ট্রোক শব্দও এখন সবার পরিচিত। প্রচণ্ড গরম, আর্দ্রতার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এমনকি মারাও যান। গরমের দাপটে কিংবা শরীর ডিহাইড্রেটেড (পানিশূন্য) হয়ে পড়লে স্ট্রোক যে চোখেও হতে পারে, সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই ধারণা নেই।

ঘুমের সময় বাদ দিলে বেশির ভাগ সময় চোখ খোলা থাকে। বাতাসে মিশে থাকা ধুলা, ময়লা, জীবাণুর সঙ্গে গরম হাওয়ার আঁচ সরাসরি চোখে এসে লাগে। সেখান থেকেই শুরু হয় প্রদাহ। চোখে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে চোখের প্রেশার বেড়ে যায়। রেটিনা রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। চিকিৎসায় গাফিলতি করলে দুটি চোখেরই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। তা ছাড়া চোখের সঙ্গে মস্তিষ্কেরও সরাসরি যোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপ বা শর্করা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও এর প্রভাব চোখের ওপর পড়তে পারে। সে কারণেও চোখে স্ট্রোক হয়।        

লক্ষণ

  • চোখ লাল হয়ে ফুলে সমানে পানি পড়তে পারে।

  • রেটিনার ওপর রক্তজালিকা ভেসে উঠতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধা দেখা যায়।

  • চোখে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়।

  • সাদা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে হতে পারে এর গায়ে যেন ধূসর ধূলিকণা ঘুরে বেড়াচ্ছে। একে ‘ফ্লোটার্স’ বলা হয়।

  • দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। কারও ক্ষেত্রে চোখের নির্দিষ্ট একটি অংশ ঝাপসা হতে পারে। কারও পুরো দৃষ্টিশক্তিই ঝাপসা হয়। পরিস্থিতি জটিল হলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কাও থাকে।

  • বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চোখে স্ট্রোক হলে তা রোগী বুঝতে পারেন না। তবে চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। একটু সচেতন থাকলে সেই অস্বস্তি টের পাওয়া যায়।

প্রতিরোধ

  • নিয়মিত ব্যায়াম করে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

  • বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ বাদাম এবং বীজ খাওয়া। সঙ্গে যদি কিশমিশ, শুকনা ডুমুর খাওয়া যায়, তাহলে আরও ভালো।

  • ডায়েটে বিটা-ক্যারোটিনযুক্ত খাবার যেমন গাজর, পালংশাক, ব্রকলি, মিষ্টি আলু ও স্ট্রবেরি রাখা যেতে পারে। একান্তই না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।

  • রোদচশমা ব্যবহার করা।

  • চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। যেটুকু সময় চোখ দুটিকে কাজ না করালেই নয়, সেটুকু ছাড়া বাকি সময় চোখ বন্ধ করে রাখতে পারলে ভালো। প্রয়োজনে চোখের হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে।

  • ডা. মো. সফিউল ইসলাম, প্রধান জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ও চক্ষুবিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-২, ঢাকা