ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ সিওপিডি
আজ বিশ্ব সিওপিডি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জীবনের জন্য ফুসফুস’। সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। এতে শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং ক্রমেই অবনতির দিকে যায়। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত। নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বেশি।
যেসব কারণে সিওপিডির ঝুঁকি বাড়ে
ধূমপান, কয়লা ও অন্যান্য জৈব জ্বালানি ব্যবহার, বায়ুদূষণ, জন্মের সময় ওজন কম থাকা, বারবার ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়া, সিলিকা ও অ্যাসবেস্টসের কারখানায় দীর্ঘদিন কাজ করা, অ্যাজমা।
রোগের কথা
সিওপিডি রোগীর কাশি, কফ, শ্বাসকষ্ট, বুকের ভেতর বাঁশির মতো আওয়াজ, ওজন হ্রাসের মতো নানা উপসর্গ দেখা যায়। এ রোগ একেবারে কখনোই সেরে যায় না, বরং দীর্ঘ মেয়াদে রোগী কষ্টে ভুগতে থাকেন। তাই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। শ্বাসনালির প্রসারণকারী ওষুধ, প্রদাহ উপশমকারী ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিকজাতীয় ওষুধ এবং অস্ত্রোপচার ছাড়াও অধুনা স্টেম সেল থেরাপিতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে।
রোগাক্রান্ত হলে চাই জীবনধারার পরিবর্তন
চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর জীবনধারায় আনতে হবে ইতিবাচক পরিবর্তন। সিওপিডি রোগীকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম অভ্যাস করা এ রোগীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ধূমপান বর্জন আবশ্যক। কর্মঠ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে চেষ্টা করা প্রয়োজন। সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার টিকা নিতে হবে।
প্রতিরোধই সর্বোত্তম
ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক—সব পরিসরে এই রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে হবে। ধূমপান কেবল ধূমপায়ীর ক্ষতি করে না, বরং আশপাশের ব্যক্তিও এই ধোঁয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বায়ুদূষণের প্রভাব পড়ে সবার ওপরই। গাড়ির ধোঁয়া, জৈব জ্বালানিতে চালানো চুলার ধোঁয়ার প্রভাবে সিওপিডি হতে পারে যে কারোরই। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে চাই সামগ্রিক সচেতনতা। নিয়মিতভাবে গাড়ির যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজনে সেগুলো মেরামত করা বাঞ্ছনীয়।
কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু এবং অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে চাই বিশেষ যত্ন।
কারখানার শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং নিয়মিত তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
*ডা. মো. জাকির হোসেন সরকার: সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটি (বিপস)