প্লান্টার ফাসাইটিস কী, কেন হয়
পায়ের পাতায় ভর করে দাঁড়ালে মনে হয় যেন কাঁটা বিঁধছে। পায়ের নিচের দিকে গোড়ালিতে মূলত ব্যথা বেশি হয়। কয়েক কদম কষ্ট করে হাঁটার পর ব্যথা কমে আসে।
প্লান্টার ফাসা হলো পায়ের পাতার নিচে অবস্থিত একধরনের মোটা ব্যান্ড বা পর্দা। এর মাধ্যমে গোড়ালির হাড় পায়ের পাতার অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ব্যান্ডটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা এতে প্রদাহ হলে তাকে বলে প্লান্টার ফাসাইটিস। এমন প্রদাহ হলে দেখবেন, গোড়ালিতে ব্যথা, সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা ফেলতে পারছেন না। পায়ের পাতায় ভর করে দাঁড়ালে মনে হয় যেন কাঁটা বিঁধছে। পায়ের নিচের দিকে গোড়ালিতে মূলত ব্যথা বেশি হয়। কয়েক কদম কষ্ট করে হাঁটার পর ব্যথা কমে আসে। তবে হাঁটাচলা, দৌড়ানো বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
কেন হয়
● অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যথার কোনো কারণ থাকে না। তবে হাঁটতে ও দৌড়াতে গিয়ে বা খেলাধুলার সময় হঠাৎ ব্যথা লেগে এমনটা হতে পারে।
● উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হলে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা উঁচু হিলের জুতা পরে থাকলে, অতিরিক্ত দৌড়ানোর পর এ ব্যথা হতে পারে।
● গোড়ালির হাড় বেড়ে গিয়ে ক্যালকেনিয়াল স্পার হলেও প্রদাহ দেখা দেয়।
● যাঁদের আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি।
রোগনির্ণয়
উপসর্গ জেনে রোগনির্ণয় করা সম্ভব। তবে কারণ অনুসন্ধানে এক্স-রেসহ কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে।
চিকিৎসা
● ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ লাগতে পারে।
● গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা, উঁচু হিল ও শক্ত সোলের জুতা পরিহার করতে হবে।
● ওজন কমাতে হবে।
● পায়ের পাতায় গরম সেঁক বা অনেক ক্ষেত্রে গোড়ালির নিচে দিনে দু-তিনবার আইসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ডিপ ফ্রিজে রাখা পানির বোতল পায়ের নিচ বরাবর রোল করতে পারেন।
● প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নিচে নামার আগে খাটেই পা স্ট্রেচ করুন। একটি টেনিস বল পায়ের পাতার নিচে রেখে গোড়ালি থেকে আঙুল পর্যন্ত ঘোরান। শুধু সকালে নয়, দিনের যেকোনো সময় তা করতে পারেন। বলটি ঘোরানোর সময় হালকা করে এর ওপর চাপ দিন। নিয়মিত এ অভ্যাসে অনেকটাই ব্যথা কাবু হবে।
● দিনে অন্তত একবার গরম তেল মালিশ করুন। মালিশ করলে গোড়ালির অংশে রক্ত চলাচল বাড়বে। তাই ব্যথা থেকেও মুক্তি পাবেন।
এসবের পরও ব্যথা না কমলে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে থেরাপি নিতে পারেন এবং তাঁর কাছ থেকে কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম শিখে নিতে পারেন।
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন: হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং অর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, নিটোর, ঢাকা