থাইরয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি কি রক্ত দিতে পারেন
রক্তদানে বাঁচে জীবন। তবে রক্তদাতার নিজের শরীরটাও ঠিক রাখতে হবে। রক্তদাতার নিজের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যেমন ঠিক থাকতে হবে, ওজন স্বাভাবিক সীমায় থাকতে হবে, তেমনি ঠিক থাকতে হবে তাঁর থাইরয়েড হরমোনের মাত্রাও।
থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের শরীরের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি, যা থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপরই প্রভাব ফেলে। তাই এর কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক না থাকলে পারতপক্ষে রক্তদান না করাই ভালো। এমনকি রক্তদাতা তাঁর থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার জন্য কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করলেও তিনি অনেক ক্ষেত্রেই রক্তদানের জন্য উপযুক্ত হন না বলে জানালেন ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেসের সেইফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন প্রোগ্রামের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক মাসুমা রহমান।
মাসুমা রহমান বলেন, ‘অসুস্থ মানুষকে বাঁচাতে আমরা রক্তদানে উৎসাহ দিই। তবে সব সময়ই আমরা চাই, একজন সুস্থ, সবল মানুষের কাছ থেকেই রক্ত নেওয়া হোক। যিনি নিজেই কোনো রোগে ভুগছেন, তাঁকে আমরা রক্তদানে উৎসাহিত করি না। রক্তদাতা এবং রক্তগ্রহীতা উভয়ের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার দিক বিবেচনায় রাখাই চিকিৎসক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব। রক্তদাতার শারীরিক অবস্থা এবং রক্তগ্রহীতার পরিস্থিতি বিবেচনা করে রক্তদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
ঝুঁকি নেবেন না
একজন রক্তদাতার থাইরয়েড হরমোন স্বাভাবিক সীমায় থাকা আবশ্যক। নইলে রক্তদানের সময় কিংবা রক্তদানের পর তাঁর হৃৎপিণ্ডের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এমনকি হৃৎপিণ্ডের বৈকল্যও দেখা দিতে পারে। তাই থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত রক্তদান করবেন না।
ওষুধ চলমান থাকলে করণীয়
থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেশি থাকলে তা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। আর এর ঘাটতি থাকলে এমন ওষুধ দেওয়া হয়, যাতে হরমোনের মাত্রা বাড়ে। মোট কথা, হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক সীমায় নিয়ে আসাটাই থাকে চিকিৎসার লক্ষ্য।
এসব ওষুধ চলমান থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে কি না, তারও রয়েছে কিছু বিধিবিধান :
থাইরয়েড হরমোন কমানোর ওষুধ চলমান থাকলে কিংবা এই ওষুধ বন্ধ করার পর অন্তত ২৪ মাস পার না হলে রক্ত দান করা যাবে না।
বিগত চার সপ্তাহের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন বাড়ানোর ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করা হয়ে থাকলে রক্ত দান করা যাবে না। অন্তত চার সপ্তাহ এই ওষুধ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করার পর যদি থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক সীমায় চলে আসে, কেবল তখনই রক্ত দান করা যাবে।
আরও কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। যেসব ক্ষেত্রে কোনোভাবেই রক্ত দান করা যাবে না—
থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক সীমায় না এলে (চিকিৎসা নিলেও কারও কারও হরমোনের মাত্রার তারতম্য থাকতে পারে)।
ক্যানসারের কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকলে।
রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন দিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে, চিকিৎসাসম্পন্ন হওয়ার পর অন্তত ছয় মাস অতিক্রান্ত না হলে।
যে রোগের জন্য থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য দেখা দিয়েছে, তা নির্ণয় করার জন্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা চললে।