৭০ বছর বয়সে মা হয়েছেন এই নারী, চিকিৎসকেরা কী বলছেন
৭০ বছর বয়সে কি একজন নারী মা হতে পারেন? সাধারণভাবে উত্তর আসবে—‘না’। কিন্তু সম্প্রতি ৭০ বছর বয়সী এক নারী সেই অসাধ্যই সাধন করেছেন। তা–ও একটা নয়, যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন উগান্ডার এক নারী। বিবিসি নিউজের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে এক ভারতীয় নারী মা হয়েছিলেন ৭৩ বছর বয়সে। সাধারণভাবে সবাই জানেন, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর একজন নারীর সন্তান ধারণক্ষমতা কমতে থাকে। ৭০ বছর বয়সে এসে একজন নারীর নিজস্ব ডিম্বাণু থাকে না, যা থেকে কোনো ভ্রূণ সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে কীভাবে এ বয়সে এসেও মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া সম্ভব?
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার ওমেন’স হসপিটাল ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ফারটিলিটি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এডওয়ার্ড তামালে সালি জানান, ৭০ বছর বয়সী নারী সাফিনা ইন ভিট্রো ফারটিলাইজেশন পদ্ধতিতে মা হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গীর শুক্রাণু ও অন্য এক নারীর ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণ তৈরি হয়েছে। তবে সেই ভ্রূণ বেড়ে উঠেছে ৭০ বছর বয়সী ওই নারীর গর্ভে। এ বয়সে মা হওয়ার ঘটনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাফল্যের চাইতেও বেশি কিছু বলা হচ্ছে। আর নিঃসন্তান হওয়ার কারণে উপহাসের স্বীকার হওয়া ওই নারী নিজে বলছেন, ‘এটা ছিল একটা মিরাকল।’
অবশ্য নিজের ডিম্বাণু থেকেও ভ্রূণ হওয়ার সুযোগ থাকে, যদি ডিম্বাণু আগে থেকেই সংরক্ষণ করে রাখা হয়। ঢাকার ইনফারটিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম জানান, কোনো নারী প্রজননক্ষম থাকা অবস্থায় যদি তাঁর ডিম্বাণু সংগ্রহ করে রাখা হয়, তাহলে পরবর্তীকালে সেই ডিম্বাণু ও তাঁর স্বামীর শুক্রাণু থেকে ভ্রূণ হতে পারে। সেই ভ্রূণ ওই নারীর জরায়ুতে স্থাপন করলে তাঁর মা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে তিনি এটাও জানান, অধিক বয়সে মা হওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতাই কমতে থাকে। তাই বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে নানা ধরনের জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন মাতৃত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, তেমনি মারাত্মক রক্তশূন্যতার ঝুঁকিও থাকে। এ বয়সে তলপেটে চাপের কারণে ব্যথাও হতে পারে। এমনকি হৃৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ডের অকার্যকর (হার্ট ফেইলিউর) হতে পারে। এ ছাড়া এ বয়সে স্বাভাবিক প্রসবেরও সম্ভাবনা থাকে না। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মের ফলে মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়ে।