সকালে খালি পেটে দারুচিনি-পানি খেলে কত উপকার, জানেন?
‘খালি পেটে জল’—এই দাওয়াই তো আমাদের দাদি-নানিরা অনেক আগে থেকেই দিয়ে আসছেন। এবার এই জলের সঙ্গে যদি এক চিমটি দারুচিনিগুঁড়া মেশানো যায়? অনেকেরই সকালটা চনমনে করে দেয় ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা অথবা কফি। এই চা, কফিতেও যদি এক চিমটি দারুচিনিগুঁড়া মেশানো যায়? তখন যে তা দারুণ এক পানীয়তে পরিণত হবে, তা কি অনুমান করতে পারেন?
আমাদের এই উপমহাদেশে দাদি-নানিদের মসলার বয়ামগুলোকে বলা যায় জাদুর কৌটা। এসব কৌটার প্রায় সব মসলাতেই পাবেন নানা ভেষজ গুণ। এর মধ্যে একটি এই দারুচিনি। এই সুগন্ধি মসলার ব্যবহার মূলত তরকারি, মিষ্টান্ন থেকে সালাদে। কিন্তু আপনি কি জানেন, পানির সঙ্গে দারুচিনির গুঁড়া মেশালে তা অন্য এক জাদু দেখাবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে খালি পেটে এক গ্লাস দারুচিনি-পানি আপনার দিনটাই স্বাস্থ্যকর করে দিতে পারে। সকালে আপনার প্রথম পানির গ্লাসে যদি দারুচিনির গুঁড়া মেশান, তা আপনার শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করবে।
দারুচিনি মেশানো পানি হজমশক্তি বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, বিপাকক্রিয়া উন্নত করে, প্রদাহ কমায় এবং হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। এ ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ পানীয়টি পান করলে ওজন কমে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে এবং ত্বক ভালো থাকে।
কীভাবে বানাবেন দারুচিনি-পানি
এক গ্লাস ফোটানো পানিতে এক চিমটি দারুচিনিগুঁড়া মেশান। এরপর ১৫-২০ মিনিট সময় নিন। চামচ দিয়ে ধীরে ধীরে নেড়ে গুলিয়ে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল দারুচিনি-পানি। এই পানি গরম–গরম খেয়ে নিতে পারেন, অথবা হালকা ঠান্ডা করেও চুমুকে চালান করে দিতে পারেন পেটে।
কী উপকার এই পানীয়র
১. হজমশক্তি বাড়ায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারুচিনি-পানি দেহের হজমকারক এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে এই পানি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। বদহজম, পেটফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যাও কমায়।
২. বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়ায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, দারুচিনি বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়ায়। দারুচিনি মেশানো পানি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। বলা হয়, দারুচিনি-পানি খেলে খাবারের অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়িয়ে বিপাকক্রিয়ার গতি বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৩. প্রদাহ কমায়
দারুচিনিতে আছে প্রদাহরোধী উপাদান। তাই এই পানি খেলে শরীরের ভেতরের জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা কমে। আর্থ্রাইটিসের মতো রোগসহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিও কমায়।
৪. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পূর্ণ
দারুচিনি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ মসলা। বলা হয়, এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ঠাসা। এই মসলা মেশানো পানি খেলে মানসিক অবসাদ দূর হয়। শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। বলা হয়, এই পানীয় বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগ উপশম করে সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৫. হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে
নিয়মিত দারুচিনি মেশানো পানি খেলে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডস (শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত চর্বি) কমায়। একইভাবে এটি শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এটা প্রমাণিত যে এই পানীয় হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৬. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
দারুচিনিতে জীবাণুনাশক উপাদান আছে। শরীরে ইনফেকশন বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করে। বলা হয়, খালি পেটে দারুচিনি মেশানো পানি খেলে শরীরকে নানা ‘রোগবালাইয়ের ঘর’ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৭. মস্তিষ্ক ভালো রাখে
দারুচিনি মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা বাড়ায়। এটি স্নায়ুক্ষয়জনিত নানা রোগ, যেমন আলঝেইমার ডিজিজ প্রতিরোধ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত দারুচিনি মেশানো পানি খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
৮. ওজন কমায়
এটা প্রমাণিত যে দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ক্ষুধা কমায়। এ কারণে দারুচিনি-পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতেও সাহায্য করে।
৯. ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
বিশেষজ্ঞদের মতে, দারুচিনির প্রদাহরোধী ও জীবাণুনাশক উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই দুটি উপাদানের কারণে ত্বকে ব্রণ উঠতে বাধা দেয়, বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হতে দেয় না। বলা হয়, দারুচিনি মেশানো পানি ত্বককে পরিষ্কারও রাখে।
১০. মাসিকের ব্যথা কমায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, দারুচিনি নারীদের মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। একই সঙ্গে এটি নারীদের প্রজনন ও হরমোনজনিত পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের বিভিন্ন লক্ষণ কমিয়ে আনে।
১১. মেজাজ ভালো করে
দারুচিনির সুগন্ধ যে কারও মেজাজ মুহূর্তে ভালো করে দিতে পারে। এই পানীয় মানসিক অবসাদ কমিয়ে শরীরকে চনমনে করতে পারে দ্রুত।
১২. জীবাণুনাশক উপাদান
দারুচিনিতে জীবাণুনাশক উপাদান আছে বলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এ ছাড়া মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও এটি উপকারী। শ্বাসপ্রশ্বাস ভালো রাখতেও কার্যকর।
সতর্কতা
কারও জন্য এই দারুণ পানীয়টি অ্যালার্জির কারণও হতে পারে। ফলে এই পানীয় খেলে ত্বকে জ্বালাপোড়া, এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসেও কষ্ট হতে পারে। আবার অতিরিক্ত দারুচিনি কারও পেটের গন্ডগোল, বমি ভাব ও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া দারুচিনি রক্তচাপ কমায়, তাই ডায়াবেটিক রোগীরা এই পানীয় খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
সূত্র: ওয়েব এমডি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া